
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট অঞ্চলের সড়ক ও রেল যোগাযোগব্যবস্থার দুরবস্থা যেন জনজীবনকে পঙ্গু করে তুলেছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক কিংবা রেলপথ - দুটোই এখন ভোগান্তির কারণ। অতীতে সিলেট থেকে তিন-চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো যেত, যানজটের কারণে আজ সেখানে সময় লাগছে ১৫ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। আমরা সুনামগঞ্জের মানুষজনও ঢাকায় যাতায়াত করতে এই সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। প্রকৃতপ্রস্তাবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সিলেট অঞ্চলের অর্থনীতি, পর্যটন ও বাণিজ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই প্রেক্ষাপটে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আহ্বানটি সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয়। তিনি বৃহত্তর সিলেটের জনগণকে
একত্র হয়ে ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই উদ্যোগে সাধারণ মানুষ যেমন আশার আলো দেখছে, তেমনি অন্য জেলার নেতৃবৃন্দের প্রতিও এটি এক ধরনের বার্তা- নিজ নিজ এলাকার অধিকার রক্ষায় এখন সোচ্চার হওয়ার সময়।
নদী, হাওর, পাহাড় ও সীমান্ত এলাকা নিয়ে গঠিত আমাদের সুনামগঞ্জ দীর্ঘদিন ধরেই উন্নয়নবঞ্চিত। জেলার প্রধান সড়কগুলো এখনো গর্ত ও ভাঙাচোরা অবস্থায়, রেলপথের স্বপ্ন বহু পুরোনো, কিন্তু বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত। বর্ষাকালে হাওরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যোগাযোগব্যবস্থার এই অচলাবস্থা জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও পর্যটনসহ সার্বিক উন্নয়নকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে। আমার উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে পিছিয়ে রয়েছি অন্যান্য জেলা থেকে। তাই আর দেরি না করে সময় এসেছে, সুনামগঞ্জ জেলার উন্নয়ন দাবিতে সোচ্চার হওয়ার। সিলেটের মতোই সুনামগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে এই অঞ্চলের অবহেলা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন, তবে সরকারের নজর ঘুরবে সুনামগঞ্জের দিকেও।
বৃহত্তর সিলেট শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, অর্থনৈতিক সম্ভাবনায়ও সমৃদ্ধ অঞ্চল। অথচ নাজুক যোগাযোগব্যবস্থা এই সম্ভাবনাকে পদে পদে থামিয়ে দিচ্ছে। এটি আর ব্যক্তিগত বা দলীয় বিষয় নয়, এটি এখন জনজীবনের মৌলিক অধিকার - সহজ, নিরাপদ ও সম্মানজনক চলাচলের অধিকার।
আমরা মনে করি, সিলেটের সাবেক মেয়রের মতো সুনামগঞ্জের জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী মহল ও তরুণ প্রজন্ম সবাই মিলে যদি এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসেন, তাহলে সুনামগঞ্জ জেলার দৃশ্যপট পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তাই এখনই সময়, সুনামগঞ্জের উন্নয়ন দাবিতে সোচ্চার হওয়ার।