
সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ও গ্রামীণ সড়কজুড়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন, ফিটনেসবিহীন ও নিষিদ্ধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য এখন সীমা ছাড়িয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকার পথেও চলছে অনুমোদনহীন সিএনজি, ‘রোহিঙ্গা’ অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ট্রলি, ট্রাক, এমনকি বড় বাসও। এসব অবৈধ যানবাহন শুধু আইন লঙ্ঘন করছে না - সড়কে বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা, যানজট ও প্রাণহানির প্রধান কারণেও পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত মোট যানবাহনের সংখ্যা ১৬ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু বাস্তবে সড়কে চলাচল করছে অন্তত তিন থেকে চার গুণ বেশি যান। অর্থাৎ, লক্ষণীয় একটি অংশ অবৈধ, যাদের কোনো রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস বা আইনি অনুমোদন নেই। এই যানবাহনগুলোর মালিক বা চালকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে ‘অলিখিত বৈধতা’ পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্যদের যোগসাজশে এসব অবৈধ পরিবহন সড়কে নির্বিঘেœ চলছে।
বৈধ যানবাহনের এই বেপরোয়া চলাচলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। শহরের প্রধান সড়কগুলো এখন পার্কিং স্পট ও অনিয়ন্ত্রিত যাত্রী ওঠানামার জায়গায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন অফিসগামী, শিক্ষার্থী, রোগী - সবাইকে পড়তে হচ্ছে যানজটের দুর্ভোগে। দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যাচ্ছে অগণিত প্রাণ। অথচ এসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অভিযানের নামে মাঝে মাঝে কিছু সিএনজি বা ইজিবাইক আটক করা হলেও, কয়েক দিন পরই তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ফলে প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো লোক দেখানো বলেই জনগণের ধারণা তৈরি হয়েছে।
সুনামগঞ্জের মতো জনবহুল ও পর্যটননির্ভর জেলায় সড়কব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এখনই শক্ত হাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহনের পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রশাসন, বিআরটিএ, পুলিশ ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনকে যৌথভাবে কঠোর মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। তৃতীয়ত, অবৈধ যানবাহন বন্ধের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের পথও খুলে দিতে হবে যাতে চালকরা জীবিকার অজুহাতে আইনের বাইরে না যায়।
সবশেষে বলা যায়- সড়ক শুধু চলাচলের মাধ্যম নয়, এটি জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক। অবৈধ পরিবহন চলাচল মানে জনজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই এখনই সময়- সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, দুর্নীতি বন্ধ করতে, আর রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহনের লাগাম টেনে ধরতে। প্রশাসন ও সরকারের নীরবতা এই বিশৃঙ্খলার অংশীদার হতে পারে না। জনগণ জানতে চায়- এই লাগাম টানবে কে?