২১ মাসে দেশের ভেতরে ১৮ ভূমিকম্প, কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ?

আপলোড সময় : ২৪-০৯-২০২৫ ০১:১১:৫৭ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৪-০৯-২০২৫ ০১:১১:৫৭ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে একাধিক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, যেগুলোর কম্পন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত হয়। তবে সম্প্রতি দেশের ভেতরেই উৎপত্তিস্থল এমন ভূমিকম্পের সংখ্যাও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দেশে অনুভূত হওয়া ৪ মাত্রার ভূমিকম্প সিলেট ছাড়াও আশপাশের এলাকায় অনুভূত হয়েছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এই ভূমিকম্পে আতঙ্কিত ছিলেন সিলেটের বাসিন্দারা। তবে হালকা ও ছোট এসব ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২৬টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের অভ্যন্তরে। এছাড়া ২০২৪ সালে ১২টি ভূমিকম্প হয়। চলতি বছর অর্থাৎ, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত দেশে ছয়টি ভূমিক¤প সংঘটিত হয়েছে। গত এক বছরে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ পর্যন্ত) সংঘটিত হয়েছে ১০টি ভূমিক¤প। তথ্য অনুযায়ী, দেশে উৎপত্তিস্থল ছিল এমন ভূমিক¤পগুলোর মধ্যে সিলেটেই ঘটেছে সর্বাধিক আটটি। এছাড়া দিনাজপুরে দুটি, রংপুরে দুটি, পাবনায় একটি, কুমিল্লায় একটি, শরীয়তপুরে একটি, টাঙ্গাইলে একটি, রাঙ্গামাটিতে একটি ও চুয়াডাঙ্গায় একটি ভূমিক¤প সংঘটিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিক¤পটি ছিল শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলায়। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে হওয়া এ ভূমিক¤েপর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১। ভূমিক¤প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবীর বলেন, বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চল অধিক ভূমিক¤পপ্রবণ। এর প্রধান কারণ হলো, এ অঞ্চলটি দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত এবং এখানে একটি প্লেট অন্যটির নিচে সাবডাক্ট হয়েছে। ফলে ভূত্বকের মধ্যে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। এছাড়া এ অঞ্চলে অনেক সংখ্যক ভূ-গাঠনিক ফল্ট বা ভাঙন রেখা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বড় এবং সক্রিয় ফল্ট রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে ভূমিকম্প সৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে একাধিক বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে এটি ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। যে কোনো সময় বাংলাদেশে ভূমিক¤প হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়, যে কোনো সময় এখানে একটা বড় ভূমিক¤প হতে পারে। ঠিক কবে হবে সেটা আমরা বলতে পারি না। তবে এই যে দেশে ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হচ্ছে, তার মানে এই না যে খুব কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই বড় কোনো ভূমিক¤প হবে। এখানে বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্পই বিভিন্ন সময় হবে। এটা অনেকটা স্বাভাবিক। ভূমিকম্প নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গণমাধ্যমকে বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প মাঝে মাঝে বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও হতে পারে। আবার এসব ছোট ভূমিকম্প যদি নিয়মিত ঘটে, তবে এর ফলে জমা হওয়া শক্তির একটি অংশ ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায়, ফলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে ভূমিকম্পের মাত্রা ও সময়ের পূর্বাভাস দেওয়া এখনো সম্ভব নয়। শুধু বলা যায়- বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্প অবশ্যম্ভাবী : দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসাইন ভূইয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান এমন যে, ভূমিকম্প হওয়া অবশ্যম্ভাবী। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেট- ইন্ডিয়ান প্লেট, বার্মিজ প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি সবসময় বিদ্যমান। বাংলাদেশের ভূগঠন মূলত নরম শিলা দিয়ে তৈরি। তাই নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি ও উচ্চ অ্যাম্প্লচিউডের ভূমিকম্প হলে ক্ষতি বেশি হয়। ভূমিকম্পের কম্পনে মাটির নিজস্ব কম্পাঙ্ক ও ভবনের কম্পাঙ্ক একসঙ্গে মিলে গেলে তা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা একেবারেই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৫০টি ছোট মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে। এক থেকে তিন মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত টের পাওয়া যায় না। কিন্তু চার বা তার ওপর হলে মানুষ তা অনুভব করতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও তৈরি হয়। ড. আনোয়ার হোসাইন ভূইয়া বলেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সচেতনতা ও পূর্বপ্রস্তুতি। এজন্য বিল্ডিং কোড মেনে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা, খালি জায়গা রাখা- যেন উদ্ধারকাজ সহজ হয়, পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা, ডাক্তার-নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষিত রাখা প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষক, স্বেচ্ছাসেবক এবং সাধারণ মানুষ সবাই মিলে কাজ করলে ভূমিক¤েপর ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, ভূমিকম্পন প্রবণ এ অঞ্চলে ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়নে আন্তর্জাতিক মানের বিধিনিষেধ মানা না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। - জাগো নিউজ

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com