স্টাফ রিপোর্টার :: বিতর্কিত ডিআইজি গাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের বাগানবাড়ির জন্য কেনা পাহাড় উৎসবের দখল করতে শুরু করেছেন স্থানীয় লোকজন। সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের সীমান্তগ্রাম চিনাউড়ায় এসে চিনাউড়া পাহাড়ে ক্রয়কৃত জমি দখল করতে শুরু করেন। তারা কোদাল, খুন্তি নিয়ে পাহাড়ের গাছপালা কেটে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে দখলের চেষ্টা করেন। তবে খবর পেয়ে প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে বাধা দিয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘ডিআইজির স্ত্রী ৬ হাজার কোটি টাকার মালিক’ শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। ওই রিপোর্টে সুনামগঞ্জে অন্তত ৩ হাজার ৫৩০ বিঘা জমি যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে স্থানীয়দের বরাতে বলা হয়। এদিকে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, ডিআইজির ক্রয়কৃত জমি পাহাড়ি এলাকা ও পাহাড়ি আকৃতির হওয়ায় বেপরোয়া দখলে গেলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই জমি প্রশাসনের জিম্মায় নেওয়ার দাবি জানান তারা। এই জমির কিছু ব্যক্তিদের কাছ থেকে কেনা এবং কিছু সরকারি খাস জমিও রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। জানা গেছে, ডিআইজি গাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের একজন স্থানীয় কর্মচারী ওই জমি দেখাশোনা করেন। স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে সোমবার কান্দিগাঁও গ্রামে সালিশ বৈঠক বসে। সালিশে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি ওই জমি দখলের জন্য স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করেন। এরপরই স্থানীয় কিছু লোক কোদাল, খুন্তি, বাঁশ নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে দখল নিতে শুরু করে। তবে ডিআইজির ওই জমি যেহেতু পাহাড়ে তাই পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে তারা প্রশাসনের শরণাপন্ন হন। সাধারণ মানুষ দখলে গেলে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনসহ পাহাড়ি মূল্যবান বৃক্ষও কেটে পরিবেশ ধ্বংস করতে পারেন। এই আশঙ্কা থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে তাৎক্ষণিক বিষয়টি পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানকে অবগত করেন একজন উন্নয়ন সংগঠক। উপদেষ্টা জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার নির্দেশনা দিলে জেলা প্রশাসন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নানকে পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নির্দেশনা দেন। উন্নয়ন সংগঠক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, ডিআইজি গাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের এক কর্মচারীর সঙ্গে স্থানীয় এক ভূমি মালিকের বিরোধ চলছে। এর জেরে সোমবার কান্দিগাঁও গ্রামে সালিশ বৈঠক বসে। শুনেছি ওই বৈঠকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডিআইজি’র সম্পদ অবৈধ উল্লেখ করে জনগণকে দখলে উৎসাহিত করেন। সালিশের পরেই শুরু হয় দখল উৎসব। কিন্তু ভূমিটি পাহাড় ও টিলা হওয়ায় এমন অবাধ দখলে পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কা আছে। তাই আমাদের দাবি ডিআইজির এই সম্পদ দখলদারদের বদলে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উচিত। না হলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। রঙ্গারচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, ডিআইজির কর্মচারীর সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধে সালিশ ছিল। সালিশে নানা বিষয় আলোচনা হয়। দখলে উৎসাহ দেওয়া বা দখলের বিষয়টি সঠিক নয়। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে ইউএনও ম্যাডাম কথা বলেছেন। তবে স্থানীয়রা দখল করতে চাইলে কিছু করার নেই জানিয়ে বলেন, ডিআইজির এই জমি সরকারি খাস জমিও রয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নান বলেন, পাহাড় দখলের খবর পেয়ে আমরা বিকেলে রওয়ানা দিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দখলদারদের নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশনা দিয়েছি। সরেজমিন ফিরে এসে আমরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেব।