
সুনামগঞ্জের হাওরে এ বছর আমন আবাদ যেন প্রকৃতির এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি - কোনোটিই এ মৌসুমে কৃষিকে বিপর্যস্ত করতে পারেনি। ফলে কৃষক নির্বিঘেœ বীজতলা প্রস্তুত, চারা রোপণ ও পরিচর্যা স¤পন্ন করতে পেরেছেন। কৃষি অধিদপ্তরও জানিয়েছে, এ বছর ৮৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন চাল। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে এ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা প্রবল। এটি নিঃসন্দেহে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আশাব্যঞ্জক বার্তা।
তবে এই আশার মধ্যেও কৃষকের কিছু আক্ষেপ রয়েছে। কৃষকরা বলছেন, সরকারের দেওয়া সার ও বীজের প্রণোদনা সীমিত সংখ্যক কৃষকের হাতেই পৌঁছেছে। বাস্তবে আমন আবাদে যেসব কৃষক মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই কোনো সহায়তা পাননি। অথচ বর্তমান সময়ে এক কিয়ার জমিতে চাষাবাদ করতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষকের কষ্ট পুষিয়ে ওঠে না। ফলে বাম্পার ফলনের আনন্দ অনেক সময় কৃষকের ঘরে ধরা দেয় না।
আমন ধান শুধু সুনামগঞ্জ নয়, দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই কৃষকের সঠিক প্রণোদনা, সময়মতো সার-বীজ সরবরাহ, সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত পরামর্শ ও তদারকি কৃষককে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
আমরা মনে করি, প্রকৃতি যদি আমনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকে, তবে সরকারের নীতিগত সহায়তা ও বাজার ব্যবস্থাপনাই হবে এর প্রকৃত পূর্ণতা। কেবল মাঠে উৎপাদন নয়, কৃষকের ঘরে হাসি ফোটাতে হলে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। কৃষকের ঘামে সিঞ্চিত ধানই দেশের খাদ্য ভিত্তি - এ বাস্তবতা ভুলে গেলে চলবে না।