৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিজয়োত্তর বিগত মাসাধিককালের মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এন্তার তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে এবং প্রকারান্তরে এই সব তথ্যনির্ভর চিন্তার খোলনলচে বদলে যাচ্ছে। অতীতের সকল হিসেব-নিকেশ উলট-পালট হয়ে গিয়ে সাধারণ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আবার অনেকেই আছেন, যারা এরমধ্যে নতুন পথের নিশানা পাচ্ছেন। তথ্যানুসারে সে-সব বিষয়ের তালিকা এতোটাই দীর্ঘ যে, বিভিন্ন বাধা-প্রতিরোধের মুখে সব কাজ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সমাধান করে ফেলা নির্দ্বিধায় বলা যায় অসম্ভব। যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায়। এই সরকারের পক্ষে কাজটি সম্ভব, তাহলেও বোধকরি পুঞ্জিভূত এন্তার সমস্যার সমাধান করতে গেলে যে - সময় লাগবে তার দৈর্ঘ্য ব্যাপকতা খুব একটা কম হবে না। ইতোমধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব উঠেছে। প্রশ্ন হলো, কী সংস্কার করা হবে? তার কোনও তালিকা করা কী সম্ভব? মোটাদাগে করা গেলেও তাতে অনেক অনেক প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - সমস্যা বাদ পড়ে যাবে।
গত রোববারের (সেপ্টেম্বর ২০২৪) দৈনিক সমকালে একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ফেলে রেখে বিকল ৩৬ কোটি টাকার যন্ত্র’, অন্য একটি শিরোনাম ছিল ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ডে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষক বুয়েটের মেধাবী তৌহিদুল’। বিস্তৃত ব্যাখ্যাতে যাবো না, কেবল সংক্ষেপে বলি, এই দুটি তথ্য বলে দিচ্ছে এই রাষ্ট্র তার বস্তুসম্পদ কিংবা মানবসম্পদের কোনওটিরই যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে না। এখানে কোনও বস্তু কিংবা কোনও লোক এবং সংবিধানসহ ব্যাপকার্থে অন্যকোনও আর্থসামাজিক নীতি-পদ্ধতি সমাজ-রাষ্ট্রের কোনও মঙ্গলে লাগছে না, ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে রাষ্ট্রকে আরও বেশি পীড়নমূলক করে তোলছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তার প্রমাণ। অর্থাৎ রাষ্ট্রের মূল কাজ থেকে রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই বৈষম্য দূরীকরণের সঙ্গে নীতিগতভাবে রাষ্ট্রের সংস্কার চাই ও অর্থাৎ সব মিলিয়ে চাওয়াটা হচ্ছে, আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কাঠামোর জনকল্যাণমুখি (যা হবে বৈষম্যবিরোধীমুখি) বদল। রাষ্ট্রকে অনিবার্যভাবে কতিপয়ের হাতে শোষণ-নিপীড়নের হাতিয়ার হওয়া থেকে মুক্ত করতে হবে। ভুলে গেলে চলবেনা, রাষ্ট্রকে আর জনগণের উপরে প্রভুত্ব বিস্তারের হাতিয়ার করে নিলে চলবেনা। কেবল এই অর্থে রাষ্ট্রসংস্কার জরুরি, অন্যথায় নয়।