
স্টাফ রিপোর্টার ::
কর্মসংস্থান ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখার উদ্যোগে গ্রাহক সমাবেশ ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (নিরীক্ষা) মো. আমিরুল ইসলাম।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কর্মসংস্থান ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ড. এএফএম মতিউর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরুণ কুমার চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক মনোজ রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনতা ব্যাংক পিএলসি, ডিজিএম রণজিত লাল সরকার ও ডাচবাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার গোলাম আজাদ, কর্মসংস্থান ব্যাংকের উপ-বিভাগের ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেন প্রধান।
সমাবেশের শুরুতে কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ছাতক উপজেলা শাখা ম্যানেজার দাউদ চৌধুরী।
সমাবেশে কর্মসংস্থান ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ড. এ এফ এম মতিউর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সুনামগঞ্জ কর্মসংস্থান ব্যাংকের ম্যানেজার রৌশন আরা। পরে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াসহ মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য বিশেষ অতিথিবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
গণশুনানীর মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা বাজারের ব্যবসায়ী ও ঋণ গ্রহিতা ইউনুস আলী। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে আরো সহজভাবে ঋণ পেতে ব্যবস্থা করতে হবে।
একই এলাকার বাসিন্দা ফার্নিচার ব্যবসায়ী নজির হোসেন বলেন, আমি প্রথমে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেছি। পরে আরো ২ লাখ টাকা নিয়েছি। তাও পরিশোধ করেছি। পরবর্তীতে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। এখন আমার ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আরও বেশি টাকার প্রয়োজন। যাদের লেনদেন ভালো তাদেরকে বেশি পরিমাণে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
অটো রাইস মিল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, আরো সহজতর উপায়ে ঋণ গ্রহণ করতে পারলে একজন ব্যবসায়ী তার জীবনমানের উন্নয়ন করতে পারবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ব্যবসায়ী মো. মোবারক হোসেন ও হারিছ মিয়া বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ আরও সহজ করার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে আমরা ঋণ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হতে পারবো।
তারা বলেন, একাধিকবার ঋণ গ্রহণ করেছি। অনেক দূরে ব্যাংকের অবস্থান থাকায় নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারিনি। তারা বিশ্বম্ভরপুর এলাকায় কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা স্থাপনের দাবি জানান।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিন বলেন, নানা রোগবালাইয়ে মোরগ মরে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বড় অংকের ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ঋষিকেশ রায় গৌতম বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংকে লোকবল সংকট নিরসন জরুরি প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরুণ কুমার চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা দেশ গড়ার কাজে নেমেছি। তাই আমাদের জীবনমানের উন্নয়নের দিক বিবেচনায় রেখে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক দায়িত্বশীল ও সেবা গ্রহিতারা যদি মনে করেন তাদের প্রতিষ্ঠান। তবে আন্তরিকভাবে কাজ করলে একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ গড়া সম্ভব হবে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজের ও এলাকার উন্নয়ন সম্ভব হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সঠিকভাবে ঋণের লেনদেন করবেন। এতে নিজের জীবনমানের উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, আমাদের যে উদ্দেশ্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছি, আসলে আমরা সেই জায়গায় পৌঁছতে পারিনি। কারণ আমাদের জানতে হবে, আমরা যাকে ঋণ দিচ্ছি, আসলে ওই ব্যক্তি ঋণ পাওয়ার যোগ্য কি না। যদি ঋণ পাওয়ার যোগ্য হয়, তবে ব্যক্তির যেমন লাভ, তেমনি আমাদের কাজেও তৃপ্তি মিলবে। কারণ আমরা সঠিক মানুষকে ঋণ দিতে পেরেছি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আপনারা ঋণ নেন, ব্যবসা করেন। তবে সঠিক সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করুন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, হাওর-বাওর অধ্যুষিত আমাদের সুনামগঞ্জ জেলা। এখাকার মানুষ জলের সাথে তাদের জীবন জীবীকা। তিনি বলেন, এই জেলা বালু-পাথরের মহাল নামে খ্যাত। বালু মহালের ইজারা বন্ধ থাকায় জেলার মানুষ বেশির ভাগ বেকার হয়ে জীবন যাপন করছে। কোনো কর্ম না থাকায় শহরে এসে রিকসা বা অটোবাইক চালনা করছে। এতে দৈনন্দিনের সংসার খরচ কিছুটা চালানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু এসব কারণে আজকাল শহরের প্রায় সকল স্থানে যানজট বেড়ে চলেছে। জেলা প্রশাসক বলেন, যদি এসব দিনমজুর মানুষের কোনো কাজের প্রশিক্ষণ থাকতো, তবে ওই পেশায় যুক্ত হতে হতো না। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে যুবকেরা। সুনামগঞ্জের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। বড় আকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়ে উঠছে না। জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের সুনামগঞ্জ জেলায় বেকার সমস্যা নিরসনে কর্মসংস্থানের জরুরি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে এসে আমার ধারণা হয়েছে, সুনামগঞ্জের কর্মসংস্থান ব্যাংক ঋণ দিয়ে মানুষকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঋণ বিতরণের হার যেমনই হোক, আদায়ের হার খুব কম মনে হচ্ছে। সকল ঋণ গ্রহিতা যদি লেনদেন ভাল রাখেন এবং নিজেকে সাবলম্বী করে তোলতে
পারেন, তবেই প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সফল হবেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের অভাব দূর করে কর্মসংস্থান ব্যাংকের সহায়তায় আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তা তৈরি করা যায়। তিনি বলেন, চামড়া শিল্প, সোলার প্যানেল, জুয়েলারী প্রভৃতি খাতে ঋণ প্রদানের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্মসংস্থান ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ড. এএফএম মতিউর রহমান বলেন, মানুষের ঋণ লেনদেন ও জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে সারা দেশে কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত পারছি না। তবে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা স্থাপনের বিষয়টি আমার চিন্তায় রাখবো। তিনি বলেন, শিক্ষিত বেকার প্রশিক্ষিত ছেলেকে ঋণ দেওয়া হবে। শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত ছেলেরা ব্যবসার কৌশল জানে। তারা ব্যবসা করে সাবলম্বী হবে এটা আমাদের বিশ্বাস।
সাবেক সচিব বলেন, আপনারা অনেকে দাবি করেছেন সিসি ঋণ দেওয়ার জন্য। আমরা আপাতত এভাবে দিচ্ছি না। সি সি ঋণ হলো ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে একটি চলতি মূলধনের ঘূর্ণনশীল ঋণ। যা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বার বার তোলা ও জমা দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে আমরা ঋণ দিচ্ছি না।
তিনি বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন, সময়মত পরিশোধ করবেন। এতে আপনার লাভ, প্রতিষ্ঠানেরও লাভ। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে নিজেদের জীবনমানের উন্নয়ন করুন।
সাবেক সচিব বলেন, সুনামগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভাবনাময় জেলা। এ জেলায় কৃষি, মৎস্য, হাওর নির্ভরপণ্য এবং পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। এসবের উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মোমতাজ উদ্দিন, বোর্ড সচিব মো. ইকবাল হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংক এজিএম মো. আজিজুর রহমান, পূবালী ব্যাংক পিএলসি এজিএম, মো. মাহমুদুন নবী, হাউজ বিল্ডিং ম্যানেজার মো. মহিমুবুল আলম, হাউজ বিল্ডিং প্রকৌশলী গোলাম সাদেক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এজিএম দুলাল চন্দ্র অধিকারী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ কর্মসংস্থান ব্যাংকের ম্যানেজার সুখেন্দ্র সিংহ প্রমুখ।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের গ্রাহক সমাবেশ ও গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার গ্রাহক ও অংশীজনগণ।