শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর দিন

আপলোড সময় : ০৯-০৯-২০২৫ ০৮:২১:৪৬ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৯-০৯-২০২৫ ০৮:২১:৪৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য আমাদের সামনে একটি স্পষ্ট বাস্তবতা তুলে ধরেছে- বাংলাদেশে এখনও প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। অর্থাৎ সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ এখনো পড়তে-লিখতে জানে না। জাতীয় অগ্রগতির এই যুগে এমন একটি চিত্র দুঃখজনক, আবার একই সঙ্গে আমাদের জন্য সতর্কবার্তাও বটে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার বর্তমানে ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। নিরক্ষর জনগোষ্ঠী মূলত বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ। তাদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো নানা কার্যক্রম হাতে নিলেও সমস্যা এখনো সমাধান হয়নি। ২০২২ সালে মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ মানুষ সাক্ষরজ্ঞান অর্জন করেছে, আবার ২০২৪ সালে সমাপ্ত উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় অনেক শিক্ষার্থী মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এসব কার্যক্রম প্রশংসনীয় হলেও এগুলোকে আরও বিস্তৃত ও টেকসই করতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে হাওর জেলা সুনামগঞ্জের অবস্থার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আর্থসামাজিক বঞ্চনার কারণে এখানকার শিক্ষার হার জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। বর্ষাকালে স্কুলে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়ে, অনেক শিশু পড়াশোনা ছেড়ে মাছ ধরা বা কৃষিকাজে যুক্ত হয়। ফলে ঝরে পড়ার হার বেড়ে যায়। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা বিদ্যালয়মুখী না হয়ে অল্প বয়সেই শ্রমজীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার অভাব। সব মিলিয়ে সুনামগঞ্জে শিক্ষার উন্নয়নে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে হলে কোনো জনগোষ্ঠীকেই পিছিয়ে রাখা যাবে না। সাক্ষরতার পাশাপাশি দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা ও জীবনমুখী প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এজন্য হাওরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা, নৌকা-স্কুল, প্রি-ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল লার্নিং সেন্টার এবং পরিবারভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, সাক্ষরতা কেবল অক্ষর জ্ঞান নয়; এটি একটি জাতির সম্ভাবনা ও মর্যাদার প্রতীক। তাই নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে আলোয় আনার দায়িত্ব আমাদের সবার। সরকার, এনজিও, সমাজসেবী সংগঠন ও স্থানীয় জনসমাজের সমন্বিত উদ্যোগই পারে শিক্ষার বৈষম্য কমিয়ে একটি সত্যিকার অর্থে জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com