সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে গোলার বিকট শব্দ শোনা যায় এবং আজ রবিবার ভোর পর্যন্ত গোলাগুলি চলতে থাকে। এতে সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। টেকনাফের ক্যা¤েপর কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে।
এখন বাংলাদেশের বাইরে তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাই যেকোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আসতে পারে। তবে যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার মুহাম্মদ কাদের হোসেন বলেন, ওপারে গোলার শব্দে রাতভর নির্ঘুম কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলাগুলি চলেছে। তাই আমরা রাত জেগে বসেছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল।
সীমান্তের বাসিন্দা মো. ইসলাম বলেন, রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারিনি। অনেকের ঘরের বাইরে রাত কেটেছে। বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে উঠছিল। ভয়ে আমরা ঘর থেকে বের হয়ে পড়ি। এমন গোলির শব্দ আগে কখনো শুনিনি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।
সীমান্তের লোকজন জানান, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাংয়ের পূর্বে নাফ নদের ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। মংডু শহরের নাফ নদ দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালটি। ওই খালের মোহনায় রোহিঙ্গাদের জড়ো হতে দেখা গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচ- বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা উদ্ধার করতে এমন গোলাগুলি চলছে বলে ধারণা করছেন সীমান্ত এলাকার লোকজন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারের এখনো সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্যে রাখাইনের বুথেডংয়ে আড়াই লাখ, মংডুতে তিন লাখ, বাকিরা আকিয়াবসহ অন্যান্য এলাকায় রয়েছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে, যেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গার বসবাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদ পার করে বাংলাদেশের টেকনাফে পালানোর চেষ্টা করছে। তবে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা আগের তুলনায় কমেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে চলমান যুদ্ধের কারণে সীমান্তে গোলার শব্দ ভেসে আসছে। সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা আমরা প্রতিহত করছি। বড়সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের খবর মনগড়া। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন। এ ছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে অপরাধী পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে খারাংখালী, টেকনাফ, পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদের মোহনা ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। সীমান্তের লোকজন বলছেন, দীর্ঘদিন বন্ধের পর আবার বড় ধরনের মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ।