শীঘ্রই একটি নির্দিষ্ট সময় হাওরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে : উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

আপলোড সময় : ০৬-০৯-২০২৫ ১২:২৪:২১ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৬-০৯-২০২৫ ১২:২৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
তানভীর আহমেদ::
অতিরিক্ত মাছ শিকার, অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ জেলার মৎস্য সম্পদ রক্ষায় করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর এই সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আরও বলেন, যারা সাময়িক লাভের জন্য অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে, তারা প্রকৃত মৎস্যজীবী নয়। এতে মাছের ক্ষতি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের কথা কেউ ভাবছে না। এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা খুবই জরুরি। চায়না দুয়ারি জাল নামটা খুবই সুন্দর। কিন্তু এই জাল এতোটাই ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক যেটা হাওরে ব্যবহার করার ফলে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই নিষিদ্ধ জাল কোনো ভাবেই হাওরে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, এই জাল বন্ধ করতে দুইটা বিষয়ে কাজ করতে হবে। প্রথম বিষয় হলো এই জাল যাতে আমদানি করা না যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো এই জাল যদি দেশে উৎপাদন হয় তাহলে সেইসব ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে হবে। সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আমরা যখন নদীতে বা হাওরে অভিযান চালাচ্ছি তখন শুধুমাত্র ব্যবহারকারীদের ধরছি, কিন্তু উৎপাদনকারীদের ধরছি না। কাজেই এই জালের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে উৎপাদনকারীদের ধরতে হবে। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, মাছের উৎপাদন বাড়াতে মাছের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে হবে। বালাইনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। হাওরে কিংবা বিলে বাণিজ্যিক হাঁসের চলাচল বন্ধ করতে হবে। হাওরে প্রাকৃতিকভাবে মাছ জন্ম নেয়। সেই প্রাকৃতিক মাছটা যেন গড়ে উঠতে পারে সেই পরিবেশটা আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। আপনার জেনেছেন যে, এই বছর আমরা মৎস্য সপ্তাহের স্লোগান নির্ধারণ করেছিলাম ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশী মাছে দেশ ভরি’। তার মানে আমাদেরকে দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আরও বলেন, এই অঞ্চলে ধান চাষাবাদ থেকে শুরু করে শীতকালে কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বর্ষা মৌসুমে সেই বিষ পানিতে মিশে মাছের ক্ষতি করছে। কীভাবে কৃষিতে বালাইনাশকের ব্যবহার কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং মৎস্যসম্পদ রক্ষা করা যায়- সে লক্ষ্যে কৃষিখাতে বালাইনাশক ব্যবহার সীমিত করতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওর সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য বলতে প্রাণবৈচিত্র্য বলেন সবকিছুই আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। আমরা যদি আরও বেশি অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে পারি, আরও বেশি পরিবেশ রক্ষামূলক কাজ করতে পারি তাহলে টাঙ্গুয়ার হাওরেও মাছের উৎপাদন বাড়বে। টাঙ্গুয়ার হাওরকে শুধু পরিবেশের দিক দিয়ে নয় মাছের দিক থেকেও যদি একটা গুরুত্বপূর্ণ হাওর হিসেবে ঘোষণা দিতে পারি তাহলে এটি রক্ষার দায়িত্ব সবার হবে। জেলেদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, শীঘ্রই একটি নির্দিষ্ট সময় হাওরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। সেই লক্ষ্যে আগামী বছরের জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। সেই আবেদন অনুমোদন হলে জেলেদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। জেলের প্রণোদনা দেওয়া আমাদের কর্তব্য।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আরও বলেন, বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মিঠা পানির মাছ চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছের প্রাপ্যতা বাড়লেও তা নিরাপদ কিনা, সে বিষয়েও নজর দিতে হবে। নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে মিঠা পানির মাছের চাষ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, মাছের বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশ অনন্য। তাই মাছের বৈচিত্র্য রক্ষা এবং হাওর-নদীসহ প্রজননক্ষেত্রগুলো সংরক্ষণে জোর দিতে হবে। নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি হাওরেরও নাব্যতা ফেরাতে হবে। আপনাদের বক্তব্য থেকে এসেছে হাওরে পলি জমে হাওর ভরাট হচ্ছে। হাওর থেকে পলি সরাতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমরা সেই বিষয়টাও বিবেচনায় রাখবো। হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়ক বা অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা যাবে না। কীভাবে হাওর রক্ষা করা যায়, সে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, মৎস্য অধিশাখার যুগ্মসচিব শাহীনা ফেরদৌসীসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। এসময় পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্থানীয় মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com