
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের গুদামে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণের ঘটনায় এবার জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি জুডিসিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ৩ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও
ডেপুটি সিভিল সার্জনসহ তিনজনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে কোটি টাকার ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের কারণ, দায়িদের শনাক্তকরণ ও করণীয় বিষয়ে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের এমন ঘটনা জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। দাবি ওঠেছে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে। তদন্ত কমিটি এই ওষুধ কিভাবে গুদামে এসেছে তা জানতে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের গুদামে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রায় আড়াই কোটি টাকার ওষুধ পাওয়া যায়। যার মেয়াদ ৬ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে।
এন্টিবায়োটিক, শিশুদের জন্য ওষুধ, গ্যাসের ওষুধসহ অন্তত ১২ ধরনের ওষুধের মজুদ রয়েছে গুদামে। যা গত এপ্রিল, জুন এবং সর্বশেষ ৩১ আগস্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, এই ওষুধ কিভাবে গুদামে এলো এটাকেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। কারণ এসব ওষুধের কোনও কাগজপত্র হাসপাতালে নেই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে যারা এসব ওষুধ রিসিভ করেছেন তার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু ওষুধের মূল্য পরিশোধ, টেন্ডার বা ভাউচারের কোনও কাগজপত্র অফিসে সংরক্ষিত নেই। তবে যারা ওষুধগুলো রিসিভ করেছে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কথা বলার চেষ্টা করছেন।
হাসপাতালের তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কোনও প্রভাবশালী গোষ্ঠী এমএসআর টেন্ডার বাগিয়ে নিতে প্রভাব বিস্তার করে আগেই ওষুধ সরবরাহ করেছিল। তারা জোর করে এসব ওষুধ হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে আতাত করে গুদামজাত করেছিল। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে আর বিলের ব্যবস্থা করতে পারেনি। কোনও কাগজপত্রও তারা অফিসে জমা দেয়নি। তবে সরকার এই ওষুধের জন্য আর্থিক কোনও লেনদেন না করলেও সরকারি হাসপাতালে কিভাবে এই ওষুধ এসেছে সেটাই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিষ্ণুপদ চন্দ বলেন, হাসপাতালে গুদামজাত মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিভাবে এলো তার কাগজপত্র খোঁজছি। কিন্তু এখনো কাগজপত্র পাইনি। যারা এসব ওষুধ রিসিভ করেছে তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তবে এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিস্তারিত বলবেন বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. সুমন বণিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।