
মানবাধিকার সংগঠন এমএসএফ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে যে চিত্র হাজির করেছে, তা ভীতিকর এবং একই সঙ্গে গভীর উদ্বেগের। আগস্ট মাসে গণপিটুনিতে ২৩ জন নিহত হয়েছেন, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা তিনগুণ বেড়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে মানুষ। একই সময়ে নারী ও কন্যাশিশুর ওপর সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা ভয়াবহ আকারে বেড়ে ২২৩-এ পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৮৪ জন নারী ও কন্যাশিশুর প্রাণহানি আমাদের সামাজিক ও মানবিক নিরাপত্তার ভাঙাচোরা কাঠামোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। গণপিটুনি আজ যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। চুরি, ডাকাতি কিংবা সামান্য সন্দেহের ভিত্তিতেও মানুষ বিচার না চেয়ে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। একইভাবে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানি গণতান্ত্রিক সমাজে মুক্ত সংবাদপত্রের প্রতি এক সরাসরি আঘাত। এছাড়া, নারী ও কন্যাশিশুর ওপর চলমান সহিংসতা আমাদের সামাজিক চিত্রকে ভয়ঙ্করভাবে কলঙ্কিত করছে। ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, আত্মহত্যা, অপহরণ - প্রতিটি ঘটনার পেছনে রয়েছে দায়মুক্তির সংস্কৃতি, বিচারহীনতার প্রবণতা এবং পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। যখন মাসে গড়ে শতাধিক নারী ও শিশু নৃশংসতার শিকার হয়, তখন এটি আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি জাতীয় সংকট। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, অপরাধীকে দ্রুত ও দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করা। তবে কেবল আইনের শাসনই যথেষ্ট নয়, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক পরিম-লে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সমান সম্মান ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা না হলে সহিংসতা কমবে না। আমাদের প্রয়োজন একটি সর্বস্তরের সামাজিক আন্দোলন। গণপিটুনি ও সহিংসতার সংস্কৃতি ভাঙতে হলে নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে হবে। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজ - সবার সম্মিলিত দায় স্বীকার না করলে এ মৃত্যুমিছিল থামানো যাবে না। আমরা মনে করি, এখনই জরুরি ভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ, সামাজিক প্রতিরোধ ও মানসিকতার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় প্রতিমাসেই নতুন নতুন পরিসংখ্যান কেবল আমাদের অসাড় করে দেবে, আর নৃশংসতার শিকার হবে নিরীহ মানুষ - যার দায় এড়ানোর সুযোগ রাষ্ট্র বা সমাজের কারও নেই।