
সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রকে আধুনিক রূপে গড়ে তোলা। প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর অবশেষে এই প্রতিষ্ঠান ৬ শয্যা থেকে ২০ শয্যায় উন্নীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আটতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল, যা হাওর অধ্যুষিত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য সত্যিই আশার আলো জ্বালিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বরাদ্দের অভাবে দীর্ঘ এক বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। এর ফলে শুধু ইট-পাথরের একটি কাঠামো নয়, থমকে আছে হাজারো মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা।
গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর সেবা নিশ্চিতে এ কেন্দ্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিদিন এখানে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন নবজাতক চিকিৎসা সেবা নেয়, মাসে ৫০ থেকে ৬০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়। অথচ মাত্র ৬ শয্যার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক সময় প্রসূতি মাকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা দেওয়ার মতো সুবিধা নেই। তাই নতুন ভবন ও ২০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু হলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতো।
এখন প্রশ্ন হলো- কেন বরাদ্দের অভাবে একটি চলমান উন্নয়ন প্রকল্প এভাবে থমকে থাকবে? সরকারি প্রকল্পের জন্য পরিকল্পিত ও টেকসই বরাদ্দ নিশ্চিত করা তো সরকারের দায়িত্ব। অথচ সুনামগঞ্জ মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের কাজ ৫১ ভাগ শেষ হওয়ার পরও বরাদ্দের অভাবে সেটি ঝুলে গেছে। এর ফলে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে, একই সঙ্গে জনমানসে হতাশা গভীর হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ একটি হাওর অধ্যুষিত ও দুর্গম এলাকা। এখানে বেসরকারি হাসপাতালে প্রসব করাতে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়, যা অধিকাংশ নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য এই মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি একমাত্র ভরসাস্থল। এই কেন্দ্রের উন্নয়ন থেমে থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেই মানুষগুলো, যাদের জন্যই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল।
আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বরাদ্দ নিশ্চিত করে আটতলা ভবনের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে কাজ যেন দীর্ঘসূত্রতায় না ভোগে, তার জন্যও কার্যকর মনিটরিং দরকার।