কারা বিভাগের নামকরণ হচ্ছে ‘কারেকশন সার্ভিস বাংলাদেশ’

আপলোড সময় : ২৭-০৮-২০২৫ ০৯:২৩:২৭ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৭-০৮-২০২৫ ০৯:২৩:২৭ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: কারাগারকে কেবল বন্দিদের আটকে রাখার জায়গা নয়, বরং একটি সংশোধন ও পুনর্বাসনের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদফতর। এ জন্য জেল বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিস বাংলাদেশ’ রাখার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বন্দিদের সেবার মান বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন। সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে পুরান ঢাকার কারা সদর দফতরে ‘কারেকশন সার্ভিস অ্যাক্ট ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। কারা মহাপরিদর্শক বলেন, আমরা চাই কারাগার হোক একটি কারেকশনাল সার্ভিস। এখানে যারা আসবে তারা শুধুই বন্দি হয়ে ফিরে যাবে না, বরং সংশোধিত মানুষ হিসেবে সমাজে ফিরতে পারবে। তিনি জানান, এ জন্য কারেকশন সার্ভিস অ্যাক্ট ২০২৫-এর খসড়া তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে কারা ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা আনা হবে, যা আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বছরের পর বছর ধরে কারাগারগুলো জনবল সংকটে রয়েছে জানিয়ে আইজি প্রিজন্স বলেন, সম্প্রতি সরকার ১ হাজার ৮৯৯ জন নতুন জনবল নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া আরও দেড় হাজার জনবল নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন নিয়োগ এলে কারাগারের ভেতরের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাজ আরও সহজ হবে। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি সংখ্যা ধারণক্ষমতার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এ সমস্যা নিরসনে ইতোমধ্যে নতুন দুটি কেন্দ্রীয় ও চারটি জেলা কারাগার চালু হয়েছে। ঢাকায় অতিরিক্ত চাপ কমাতে রাজধানীর ভেতরে কারাগার বিভাগকে ভাগ করে দুটি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট করা হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে একটি কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে বন্দিরা বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। কারাগারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বডি স্ক্যানার, মোবাইল জ্যামিং সিস্টেম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক জানান, বন্দিদের খাবারের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং খাবারের মান উন্নয়নে কঠোর মনিটরিং চালু রয়েছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে ফোনকল ও সাক্ষাতের ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে ভার্চুয়াল কোর্টে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যাতে বন্দিদের আদালতে আনা-নেওয়ার ঝামেলা কমে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ২০ ইয়ার্স রুল পুনরায় চালু করা হয়েছে, যার ফলে অনেক বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। আইজি প্রিজন্স বলেন, জামিন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ ছিল। এখন সে ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তাকে শাস্তি ও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শুধু বন্দিদের জন্য নয়, কারাগারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষীদের জন্য আজীবন রেশন সুবিধা অনুমোদন হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পেশাগত উন্নয়নেও জোর দেওয়া হচ্ছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ, আধুনিক ও মানবিক কারা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কারাগারকে সত্যিকার অর্থে সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করতে যা যা প্রয়োজন, আমরা তার সবকিছু বাস্তবায়নে কাজ করছি।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com