
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মানুষ যখন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়ায়, তখন একটি অ্যাম্বুলেন্সই হয়ে ওঠে ভরসার প্রতীক। কিন্তু সেই ভরসাই যদি প্রতারণার আড়ালে পরিণত হয় ভয়াবহ হয়রানিতে, তবে তা শুধু দুঃখজনক নয় - এটি অপরাধ। সুনামগঞ্জে যেভাবে ফিটনেসবিহীন সাধারণ মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স সাজিয়ে রোগী পরিবহন করা হচ্ছে, সেটি জনস্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি শুধু রোগীর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে না, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিরিক্ত ভাড়ার জালও ফেলছে। রোগীর স্বজনরা ইচ্ছে করলেও পছন্দমতো অ্যাম্বুলেন্স নিতে পারছেন না। ‘সিরিয়াল’ নামের অজুহাতে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং সিলেটের হাসপাতালে পৌঁছানোর পরও ‘টাউন ট্রিপ’ নামের চাঁদাবাজি - সব মিলিয়ে অসুস্থ ও অসহায় মানুষদের প্রকৃত অর্থেই জিম্মি বানানো হচ্ছে।
অ্যাম্বুলেন্সের যে ন্যূনতম মানদ- থাকার কথা- অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্ট্রেচার, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম কিংবা প্রশিক্ষিত সহকারী তার কিছুই নেই এ গাড়িগুলোতে। কেবল বাহ্যিক রঙচঙে সাজে ‘অ্যাম্বুলেন্স’ নামকরণ। অথচ বিআরটিএর নথিতে সুনামগঞ্জে ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনও অ্যাম্বুলেন্স রেজিস্ট্রেশনই নেই। এটি স্পষ্ট করে দেয়, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং আইনের ফাঁক গলেই চলছে এই বাণিজ্য।
প্রশ্ন হচ্ছে, একাধিকবার অভিযান চালানোর পরও কেন সিন্ডিকেটের অবসান ঘটেনি? জরিমানা আদায় হয়, কিন্তু অবৈধ কার্যক্রম আবারও মাথা তোলে। এটি কি কেবল প্রশাসনের দুর্বলতা, নাকি কোথাও অদৃশ্য প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া রয়েছে?
আমরা মনে করি, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সুনামগঞ্জের মানুষের জীবন বাণিজ্যের পণ্যে পরিণত হবে। প্রথমত, অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে অনুমোদনহীন সব গাড়িকে দ্রুত জব্দ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সাথে সমন্বয় করে নিবন্ধিত, মানসম্মত অ্যাম্বুলেন্স চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, রোগী পরিবহনে ভাড়া নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
আমরা মনে করি, মানবিক সেবার জায়গাটি কোনোভাবেই বাণিজ্যিক জিম্মিদারিতে পরিণত হতে পারে না। রোগী পরিবহন সেবা এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে লাভের চেয়ে জীবনরক্ষাই হওয়া উচিত মুখ্য লক্ষ্য। এই সংকট যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে রোগীর জীবনরক্ষার শেষ ভরসাও হয়ে উঠবে অনিশ্চিত।