মানা হচ্ছে না নির্দেশনা : টাঙ্গুয়ার হাওরে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা চলছেই

আপলোড সময় : ২৪-০৮-২০২৫ ০৮:৫৫:৫৩ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৪-০৮-২০২৫ ০৮:৫৮:১২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
টাঙ্গুয়ার হাওরে বন্ধ করা যাচ্ছে না উচ্চ শব্দে গান-বাজনা। দিনের পর দিন পর্যটকদের হাওরে আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত স্থানীয় ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছাড়াও, হাউসবোটগুলোতে চলে উচ্চ ভলিউমে ডিজে পার্টি ও লাউডস্পিকারের তা-ব। তবে, লাউডস্পিকারের তা-ব বেশি লক্ষ করা যায় স্থানীয় ছোট-বড় নৌকাগুলোতে। এছাড়াও, হাওরে রাতের বেলায় অনেক হাউসবোটে উচ্চ ভলিউমে গান-বাজনা চলার অভিযোগও রয়েছে।
শুক্রবার ও শনিবার (২২ ও ২৩ আগস্ট) দুইদিন টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখা যায়, ওয়াচ-টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় ‘নিরিবিলি’ নামের একটি হাউসবোটে চলছে উচ্চ শব্দে গানবাজনা। লাউড স্পিকারের গান বাজিয়ে আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরাও। নাচা-নাচিরর পাশাপাশি করছেন হৈ-হুল্লোড়। এই হাউসবোটে ৭০ জন পর্যটক ছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়া, ‘সীমা-তমা’ নামের একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অন্তত ৫০-৫৫ জন পর্যটকদের হাওরে আসতে দেখা যায়। নৌকার কাছাকাছি গেলে দেখা যায়, পর্যটকরা ৪টি লাউড স্পিকার নিয়ে হাওরে এসেছেন।
নৌকাটি জামালগঞ্জ উপজেলা থেকে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে হাওরে প্রবেশ করে বলে জানাযায়। নৌকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ধরনের সুরক্ষাসামগ্রীও ছিল না।
শনিবার বেলা ১২টায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ-টাওয়ারের একদম পাশে লাউডস্পিকারসহ একটি মাঝারি সাইজের নৌকা দেখা যায়। তবে, তখন গান-বাজনা বন্ধ ছিলো। একই দিন দুপুরে ‘হাওর বিলাস’ নামক একটি নৌকায় ২টি মাইক ও ২টি সাউন্ড বক্স দেখা যায়। সেই নৌকায় ৩০ জন পর্যটক ছিলেন বলে জানা যায়। তবে, এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
হাওরে লাউডস্পিকার নিয়ে এসেছেন কেন? এমন প্রশ্ন করলে ‘সীমা-তমা’ নৌকার চালক আইন উদ্দিন জানান, দূর থেকে আসছি তো, এজন্য পর্যটকরা স্পিকার নিয়ে এসেছেন। আমরা আর হাওরের ভেতরে এটি চালাবো না। নিরিবিলি হাউসবোটের এক ব্যক্তিকে হাওরে এসে উচ্চ শব্দে গান বাজাচ্ছেন কেন এমন প্রশ্ন করার পর তিনি পর্যটকদের গান বন্ধ করার কথা বলেন। কিন্তু তারপরও পর্যটকরা গান বন্ধ করেননি। গান বাজিয়ে ওয়াচ টাওয়ার প্রবেশ করতে দেখা যায় তাদের। পরিবেশবাদী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থার কারণে দিনের পর দিন হাওরের পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, প্রতিনিয়তই বিভিন্ন নৌকায় গান-বাজনা চলে। ঈদের সময় গান-বাজনা বেশি বাজানো হয় হাওরাঞ্চলে। এগুলো বন্ধ করা জরুরি।
নোয়াখালী থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের এসেছেন সুলতানা বেগম। তিনি বলেন, হাওরে একদল তরুণ ঢাক-ঢোল, গিটার বাজিয়ে গানবাজনা করছে, এটা কোনোভাবেই মেয়ে নেওয়া যায় না। গানবাজনা বাজিয়েই যে আনন্দ ভাগাভাগি করতে হবে এমন তো নয়! এগুলো করা থেকে নিরুৎসাহিত করতে হবে পর্যটকদের। তাহলে হাওরে শব্দদূষণের মাত্রা কমে আসবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রবেশমুখে সাঁটানো আছে বিলবোর্ড। যেখানে উচ্চ শব্দে গানবাজনা, লাউডস্পিকার ব্যবহার এবং যান্ত্রিক নৌকার অবাধ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। পর্যটকদের নৌকাগুলোতে দিনভর চলে উচ্চ ভলিউমে গান, যা হাওরের শান্ত পরিবেশকে বিঘিœত করছে। এতে বিপন্ন হচ্ছে পাখির প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এমন কর্মকা- চলতে থাকলে হাওর তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য হারাবে। হাওরজুড়ে অতিথি পাখির আনাগোনা কমে যাওয়ার পেছনে শব্দদূষণকে একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। উচ্চ শব্দের কারণে পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে যখন হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসে, তখন তাদের জন্য এই শব্দ এক অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করে। এছাড়া, হাওরের ভেতরে থাকা অন্যান্য বন্যপ্রাণী, যেমন সাপ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীও শব্দদূষণের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তারা বলছেন, স্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এই অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব নয়। হাওরের ইকো-ট্যুরিজমকে টিকিয়ে রাখতে হলে কঠোরভাবে নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করা উচিত। টাঙ্গুয়ার হাওরকে তার স্বকীয়তা ফিরিয়ে দিতে হলে পর্যটকদের আরও সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি, প্রশাসনকে নিয়মিত তদারকি এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি হাওরবাসীর।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান মানিক বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। কোনো অবস্থায় হাওরে গানবাজনা বাজানো যাবে না। যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com