
তাহিরপুর সীমান্তে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা বালুর আগ্রাসনে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট আজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ের ঝর্ণাধারা বৃষ্টির দিনে প্রবল স্রোতের সাথে বালু ও পাথর নামিয়ে আনে। এই বালুর চাপে উত্তর বড়দল ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের কয়েকশত কৃষক পরিবার প্রায় প্রতি বছরই বিপর্যয়ের শিকার হন। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী গত ১৬ বছরে কমপক্ষে ৫শ হেক্টর জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
২০০৮ সালে প্রথমবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ১৬ বছর পরও এর কোনো কার্যকর সমাধান হয়নি। সীমান্তের কৃষকেরা আজও আতঙ্ক নিয়ে বর্ষা মৌসুম পার করেন।
স্থানীয় আদিবাসী নেতা এন্ড্রু সলোমার যথার্থভাবেই বলেছেন, ভারতে অপরিকল্পিত কয়লা-চুনাপাথর উত্তোলন ও পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের ফলেই পাহাড় ধস বাড়ছে। এর সরাসরি খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষককে। চাঁনপুর এলাকায় যে বিস্তীর্ণ জমি এক সময় উর্বর ফসলি মাঠ ছিল, তা আজ বালু-পাথরে ভরাট হয়ে গেছে। শুধু জমিই নয়, স্থানীয় সড়কপথও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ অবস্থায় সরকারের করণীয় কয়েকটি দিক পরিষ্কার। প্রথমত, কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসতে হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড় কেটে উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে যে বিপর্যয় বাংলাদেশের ভেতরে তৈরি হচ্ছে, তার দায়ভার এড়ানো যায় না। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় কৃষকদের জন্য দ্রুত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। ফসলি জমি বালুর নিচে চাপা পড়ায় কৃষক পরিবারগুলো জীবিকার পথ হারাচ্ছেন। তাদের দুর্দশা লাঘবের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যেসব জমি বালুমুক্ত করা সম্ভব, সেখানে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে। আমরা মনে করি, সরকারকে এখনই জরুরি ও সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। দেরি হলে সীমান্তের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি স¤পূর্ণভাবে হারিয়ে যাবে, আর কৃষকেরা হয়ে পড়বেন ভূমিহীন।
বালুর আগ্রাসন ঠেকানো শুধু কৃষিজমি রক্ষার প্রশ্ন নয়, এটি পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও সীমান্তবর্তী মানুষের জীবিকার সুরক্ষার প্রশ্ন। তাই এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে - কূটনৈতিক টেবিলে, প্রশাসনিক উদ্যোগে এবং স্থানীয় পর্যায়ে।