
সড়ক যোগাযোগ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনজীবনের স্বস্তি ও নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান নিয়ামক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, যা প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র ভরসা, সেই সড়কের চার লেন প্রকল্প ভেস্তে গেছে। পরিকল্পনা কমিশন ‘অনুপযোগী’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রকল্পটি বাতিল করেছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষ এই সড়ককে প্রশস্ত ও নিরাপদ সড়কে রূপান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, সড়কটি তার ধারণক্ষমতার চেয়ে বহুগুণ বেশি যানবাহন বহন করছে। সরু ও অনিরাপদ সড়ক প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। প্রতিদিন প্রায়ই ঘটে যাচ্ছে প্রাণহানির ঘটনা। পরিবহন মালিক, শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রী - সবাই একবাক্যে বলছেন, সড়ক প্রশস্ত না করলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। তাহলে প্রশ্ন জাগে- যেখানে প্রয়োজন মর্মে সচেতন সমাজ, পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রী সাধারণ একমত, সেখানে প্রকল্পকে অনুপযোগী আখ্যা দেওয়ার ভিত্তি কী? পরিকল্পনা কমিশনের যুক্তি হয়তো কাগুজে পরিসংখ্যানের সঙ্গে খাপ খায়, কিন্তু বাস্তবতা ও জনচাহিদার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।
এই সড়ক শুধু একটি জেলা নয়, পুরো হাওরাঞ্চলের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন এবং কর্মসংস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চার লেনে উন্নীত হলে সড়কপথে পণ্য পরিবহন সহজ হতো, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসতো, পর্যটন শিল্প বিকশিত হতো এবং সবচেয়ে বড় কথা, দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যেত। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনরক্ষার প্রশ্নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ছিল সময়ের দাবি।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রকল্প বাতিল হলেও সড়কের দু’টি স্থানে আংশিক চার লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক পদক্ষেপ, তবে সামগ্রিক সমস্যার কোনো সমাধান নয়। সড়কটিকে সম্পূর্ণ চার লেনে উন্নীত করার বিকল্প নেই।
সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে অবশ্যই এই প্রকল্প পুনর্বিবেচনায় নিতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন থেকে বের হয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা কেবল একটি অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, এটি হাওরাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আমরা মনে করি, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে, প্রতিদিনের দুর্ঘটনা, যানজট ও অর্থনৈতিক ক্ষতির দায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও বহন করতে হবে। তাই সময় এসেছে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের হাওরাঞ্চলের এই ন্যায্য দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করার।