সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল তাদের এদেশের মানুষ ভালো করে চেনে ও জানে। এসব দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের এদেশের মানুষ আর দ্বিতীয় ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল পায়নি। ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে মানুষের কোনো দুঃখ-দুর্দশা আর থাকবে না।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের আল্লাহু চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা জেলা দক্ষিণের উদ্যোগে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে শাসকগোষ্ঠীদের মোহ ও উচ্চাভিলাসকে অগ্রাধিকার দিয়ে আইন প্রণয়ন করার কারণে দেশে কখনোই জনতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কর দিয়ে বারবার স্বৈরাচার ও দুর্নীতিবাজ সরকার পুষেছে, যারা দেশের জন্য কাজ করেনি। যার ফলে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি, বৈদেশিক ঋণের বোঝা বেড়েছে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এবং জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে।
সংগঠনের ঢাকা জেলা দক্ষিণ সভাপতি হাফেজ মুহাস্মদ জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম ও জয়েন্ট সেক্রেটারি হাজী শাহীন আহমাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী রেজাউল করীম আবরার।
গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ঢাকা জেলা দক্ষিণের সহসভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ হানিফ মেম্বার, অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান, মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন, শ্রমিকনেতা আলহাজ্ব শাহীন খান, যুবনেতা মিরাজ হোসেন মঈন, ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ মাহমুদসহ জেলা সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শায়খে চরমোনাই আরো বলেন, দেশের অরাজকতার পেছনে দায় হলো নীতি ও আদর্শের অনুপস্থিতি। সুতরাং ব্যক্তি সংস্কারের পাশাপাশি নীতির সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশের সংবিধান সংস্কার করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে নতুন সংবিধান ঢেলে সাজাতে হবে। নাহলে দেশ আবারো অরাজকতার মুখে পড়বে, দলীয় শাসন ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হবে। আবারো শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়ে যাবে। তাই শুধু শাসকের পরিবর্তন নয়, নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে।
প্রধান অতিধির বক্তব্যে নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, ইসলামী শাসন ছাড়া জাতির মুক্তি নাই। ইতোপূর্বে সরকারগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে এসেছে। ইসলামী শাসনের ব্যাপারে জনমনে ভীতি তৈরি করতে স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়েছে। এর কারণ ছিল বিগত সকল সরকার তাদের দুর্নীতি-দুঃশাসন চালাতে গিয়ে ইসলামকে বিষোদগার করেছে। ইসলাম ক্ষমতায় আসলে তারা এসকল অপরাধ করতে পারত না। সুতরাং কেমন শাসন চাই, একথার উত্তরে একবাক্যে বলা যায়, শরীয়াহ ভিত্তিক সংবিধান ও অনুশাসন চাই। এ সময় তিনি বলেন ইসলাম, দেশ ও মানবতার ভিত্তিতে ঐক্যে করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর যারা দেশে মিথ্যা মামলা, লুটপাট, জুলুম, অত্যাচার করছেন তাদের হাতেও দেশ নিরাপদ নয়। তাদের আর আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা ডাকাত না, জালেম না, অত্যাচারী না, তাদের অত্যাচার করা যাবে না। আমি ওইসব ভাইদের বলব, যারা আওয়ামী লীগ করেছিলেন, যারা আদর্শবান, মনে রাখবেন, আদর্শবান ব্যক্তির দল কখনো আওয়ামী লীগ হতে পারে না। সময় আছে তওবা করুন। আগের দেশ আর আমরা চাই না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতি দূর করতে না পারলে এ দেশের পরিবর্তন হবে না। এ দেশে ওসি পরিবর্তন হয়, এসপি পরিবর্তন হয়, কিন্তু ঘুষ ঠিকই থাকে। আমরা ঘুষ ও চোর মুক্ত বাংলাদেশ চাই। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।