
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি’র অভিযোগের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ায় প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সংগঠনটির সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা করেছে। রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
তিনি বলেন, সারাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বেড়ে গিয়েছে। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা এগুলো রুখে দেব। কিন্তু এ কমিটিগুলোতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রভাবে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছেন। এ কমিটিগুলো যখন গঠন করা হয়েছিল, সে কমিটি গঠনের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা যেহেতু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের ভেতরে চলে গিয়েছে। তাদের প্রশ্রয় পেয়ে জুলাই যোদ্ধারা বিপথগামী হয়েছে। এ মুহূর্তে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অর্গানোগ্রামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারা দেশের সকল কমিটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
সাধারণ স¤পাদক হাসান ইনাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে সারাদেশে নানা অপকর্ম, চাঁদাবাজি, দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। আমরা এসব বরদাস্ত করব না। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানকে ধারণ করে এ সংগঠন চালিয়েছি।
রাজধানী ঢাকার গুলশানে ‘চাঁদা নিতে গিয়ে’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতাসহ পাঁচজনকে শনিবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশান ২ নম্বরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের বাসার সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার এদের মধ্যে চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। রিমান্ডে যাওয়ারা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ এবং সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। এ মামলার অপর আসামি শিশু। এ ঘটনার আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনটির নেতৃস্থানীয়দের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অনেক অনিয়মের ঘটনার খবর প্রকাশ পেয়েছে। গুলশানের ঘটনার সংবাদ প্রকাশের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি স্থগিতের ঘোষণা দিল।
জানাযায়, বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আব্দুর রাজ্জাক (রিয়াদ)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১৭ জুলাই তিনি ও কাজী গৌরব অপু গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে হুমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে বাদী সিদ্দিক আবু জাফর ১০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন বলে এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। গুলশান থানায় করা মামলায় পুলিশ রিয়াদসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও মো. ইব্রাহিম হোসেন। মামলার আরেক আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক।
রিফাত রশিদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ব্যানারকে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি ও কিছু বিপথগামী ব্যক্তি ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ বলেন, গতকালসহ বিগত দিনগুলোর বেশ কয়েকটি ঘটনায় আমরা দেখেছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে অনেক ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কমিটির আত্মপ্রকাশের দিনই আমরা সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, এ ধরনের অপকর্ম বরদাশত করা হবে না। এরপরও বিভিন্ন মহল ও রাজনৈতিক দলগুলোর শেল্টারে অপকর্ম চলছে। এছাড়া দেখা যাচ্ছে, জুলাই যোদ্ধাদের কেউ কেউ বিপথগামী হয়েছে। এই মুহূর্তে বিষয়টি ভিজিবলি নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই অর্গানোগ্রামের জরুরি মিটিংয়ে উপস্থিত চারজন সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা হলো- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম আজ (২৭ জুলাই) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হলো।