সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
শীর্ষনেতা জাতীয় সরকারের পরিকল্পনার কথা বললেও এটা আপাতত আলোচনায় কেন্দ্রে আনতে চাচ্ছে না বিএনপি। নেতারা বলছেন, শরিক ও সমমনা দলগুলোকে আশ্বস্ত করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনেকটা আগেভাগে জাতীয় সরকারের বিষয়টি সামনে এনেছেন। তবে এখন তাদের মূল বিষয় নির্বাচন। কীভাবে অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে চান তারা। নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরোক্ষভাবে চাপে রাখা। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর জাতীয় সরকার ইস্যুতে গুরুত্বারোপ করতে চায় বিএনপি।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে সবশেষ সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেয়নি তাদের নিয়ে দেশ পরিচালনার কথা বলছেন তারেক রহমান। যাতে দলগুলোর মধ্যে বিভাজন ও মতানৈক্য তৈরি না হয়। বিএনপি এই মুহূর্তে কোনো দলের সঙ্গে স¤পর্ক নষ্ট করতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগের বিরোধী সব দলকে বিএনপি তাদের কাছাকাছি রাখতে চায়। এ জন্য ভবিষ্যৎ কিছু বিষয় নিয়ে এখন থেকেই কথা বলছেন শীর্ষনেতা। যাতে বিএনপি স¤পর্কে নেতিবাচক ধারণা না আসে। ইতিমধ্যে জামায়াতের আমিরের কিছু বক্তব্য নিয়ে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এসবের অবসান ঘটাতেই তারেক রহমান সময়োপযোগী ও কৌশলী পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন। রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে খুব সম্প্রতি এক ধরনের মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইলেও তাদের মিত্র শক্তি জামায়াত কোনো তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয়। তারা আগে সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চায়। এমনকি অতীত ভুলে সব মাফ করার ঘোষণাও দিয়েছে দলটি।
বিএনপি এ নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে। এ ছাড়া জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা কয়েকটি দল নতুন জোট গড়ার চেষ্টা করছে বলেও খবর এসেছে। এমন সময়ে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে জাতীয় সরকারের পরিকল্পনার কথা আসল। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে চায় বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর একটা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ প্রথম দিন থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে একটা বিরাট অংশ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশ গঠনে কোনো অবদান রাখতে পারেনি। স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে সেদিন যে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে, আগামী দিনে আমরা তার পুনরাবৃত্তি চাই না।
তারেক রহমান আরও বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তারা আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন। যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়। পাশাপাশি দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা জানান তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, জাতীয় সরকার অদূর ভবিষ্যতের চিন্তা। এখন আমাদের মুখ্য আলোচনা নির্বাচন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনে যেসব দল ভূমিকা রেখেছে; আন্দোলনের মাঠে ছিল তাদের নিয়ে দেশ পরিচালনার কথা বলেছেন তারেক রহমান। তবে আওয়ামী লীগকে এই সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। বিএনপি সরকার গঠন করলে সব দলকে নিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। মানে সরকারের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারে দলগুলোকে কাজে লাগাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, জাতীয় সরকার গঠন করা একটা টেকনিক্যাল ঝামেলা আছে। জাতীয় সরকার বলতে সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন। তাহলে এখানে আওয়ামী লীগও তো থাকতে পারে। সেই প্রশ্ন তো চলেই আসে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না এখনই বলা যাচ্ছে না। সুতরাং এগুলো অনেক পরের বিষয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনেক আগেই বিষয়টি বলে ফেলেছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী সব ঠিক করা হবে। আবার আমার কাছে এটি পুরস্কারের মতো মনে হয়। এ পরিকল্পনা জানান দেওয়ার মাধ্যমে শরিক দলগুলোকে আগেই আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় নিয়ে আসা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, জাতীয় সরকার বলতে আমরা যা বুঝি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়তো তাই বলার চেষ্টা করেছেন। সাধারণত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হয়ে থাকে। এটার রূপরেখা আরও পরে বলা যাবে। দলীয় ফোরামে এ বিষয়ে এখনও আলাপ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগপৎ শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ স¤পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রথমত এটি বিএনপির নিজস্ব পরিকল্পনা। যে কোনো দলের এমন চিন্তা থাকাটা স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ করে জাতীয় সরকারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা মানে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো। নির্বাচন এখনও বহু দূরে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাকি আছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, বিএনপির একটি প্রতিশ্রুতি আছে যারা আন্দোলনে ছিল, সরকারের প্রলোভনে পা দেয়নি; তাদের নিয়ে সরকার গঠন করা। তবে এখানে কোনোভাবেই পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরার আসতে পারবে না। এখন বিএনপি শরিকদের আশ্বস্ত করতে জাতীয় সরকারের কথা বলতে পারে। -সময়ের আলো