
বালুর স্তূপে পড়ে থাকা এক নবজাতকের কান্না শুধু একটি শিশুর ক্ষুধা কিংবা নিরাপত্তার আকুতি ছিল না - তা ছিল মানবতা ও বিবেকের প্রতি এক আহ্বান। মধ্যনগরের বাকাতলা গ্রামের এই ঘটনা যেন আর্তনাদ করে প্রশ্ন রাখে, আমরা কি যথেষ্ট নিরাপদ সমাজ গড়েছি যেখানে একটি শিশু জন্মের পরপরই এভাবে ফেলে দেওয়া হয়?
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য হাসিনা বেগমের মতো নারীদের, যিনি মাতৃত্বের অমোঘ টানে, অজানা এক শিশুকে কোলের মমতায় আশ্রয় দিয়েছেন। একজন মায়ের বুকের দুধে শান্ত হয়েছে কাঁদতে থাকা সেই অবুঝ প্রাণ। এ যেন এক প্রতীক- রক্তের সম্পর্ক নয়, মানবিকতার বন্ধনই সবচেয়ে বড়। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়-এই শিশুর ভবিষ্যৎ কোথায়? সমাজ কি তার জন্য প্রস্তুত?
সমাজসেবা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিশুটিকে সিলেটের ‘ছোটমণি নিবাস’-এ পাঠানো হবে। এটি হয়তো আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকে যথাযথ পদক্ষেপ। তবে আমাদের মন বলে- এই শিশুর জায়গা যেন কেবল সরকারি নিবাস না হয়, বরং একটি ভালোবাসায় ভরা পরিবার, শিক্ষা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।
এই ঘটনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও উঠে এসেছে- সন্তান দাবি করা এক নারীর উপস্থিতি। যদি সত্যিই তিনি শিশুটির জন্মদাত্রী হন, তবে কেন এমন ঘটনা ঘটলো? সমাজ কি নারীদের জন্য এখনো এমন রূঢ় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেখানে তারা সন্তান জন্ম দিয়েও তাকে রাখতে পারেন না? আমরা কি ব্যর্থ হচ্ছি নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে?
এই ঘটনা প্রশাসনের তৎপরতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত। ইউএনও, সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং পুলিশ বিভাগ যৌথভাবে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন - এটি আশাব্যঞ্জক। তবে একই সঙ্গে আমাদের চাই দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা - যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো নবজাতককে কাঁদতে না হয় বালুর স্তূপে, আর কোনো মাকে লুকিয়ে পালাতে না হয় সন্তানের কাছ থেকে।
মানবতার এই একফোঁটা শিশুর কান্না যেন গর্জন হয়ে পৌঁছায় আমাদের বিবেকের কাছে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার - তিনটিই মিলে গড়ে তুলুক এক নিরাপদ, স্নেহময় ভবিষ্যৎ - এই নবজাতক আর তার মতো শত শত শিশুদের জন্য।