ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর নেই

আপলোড সময় : ২১-০৭-২০২৫ ১১:৫৪:৫৬ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২১-০৭-২০২৫ ১১:৫৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বহু ভাস্কর্যের স্রষ্টা ও চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খান মারা গেছেন। রবিবার (২০ জুলাই) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে রাজধানীর মাদানি এভিনিউতে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগের ম্যানেজার আরিফ হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ১৪ জুলাই নিউমোনিয়া, সেপসিসসহ শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন হামিদুজ্জামান খান। এরপর থেকে তিনি গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হতে থাকলে এক পর্যায়ে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়। হামিদুজ্জামান খান বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্য আন্দোলনের পথিকৃৎ। শিল্পকলায় তার অনন্য অবদান দেশের সাংস্কৃতিক পরিম-লে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। জাতীয় স্মারক থেকে শুরু করে একান্ত চিত্রকর্ম - সবখানেই ছিল তার সৃজনশীলতার নিদর্শন। শিল্পী হিসেবে তিনি যেমন প্রশংসিত, তেমনি শিক্ষক হিসেবে অনেক তরুণ শিল্পীর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিলেন। ‘জাগ্রতবাংলা’, ‘সংশপ্তক’, ‘বিজয় কেতন’ এবং ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’ - এর মতো বহু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যের ¯্রষ্টা ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ভাস্কর্যের পাশাপাশি তিনি জলরং, তেলরং, অ্যাক্রিলিক এবং স্কেচ মাধ্যমে সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার ভাস্কর্যে পাখির বিষয়টি ছিল অত্যন্ত প্রিয়। ঢাকার বুকে ব্রোঞ্জ ও ই¯পাতের তৈরি বেশ কিছু পাখির ভাস্কর্য শিল্প জগতে তার স্বাতন্ত্র্যের সাক্ষ্য বহন করে। হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি জলরঙের চিত্রকর্মের জন্য খ্যাতি লাভ করেন, তবে পরবর্তী সময়ে ভাস্কর্যে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা হামিদুজ্জামানকে আটক করলেও পরে তিনি মুক্তি পান। ২৭ মার্চ ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় তিনি অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের এই নৃশংসতা এবং মানুষের অভাবনীয় দুর্দশা তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। এই কারণে স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে তার অধিকাংশ ভাস্কর্যের মূল বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭২ সালে তিনি ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে যৌথভাবে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নির্মাণে কাজ করেন। জয়দেবপুর চৌরাস্তায় অবস্থিত এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত। হামিদুজ্জামান খানের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, জাগ্রতবাংলা (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সার কারখানায়), সংশপ্তক (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে), বিজয় কেতন (ঢাকা সেনানিবাসে), ইউনিটি (মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে), ফ্রিডম (কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে), স্বাধীনতা চিরন্তন (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে), মৃত্যুঞ্জয়ী (আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে) এবং এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম (মাদারীপুরে)। এছাড়া, তার শিল্পী সত্তার আরেক রূপ ধরা দিয়েছে ইস্পাত ও ব্রোঞ্জে গড়া পাখির ভাস্কর্যে। আশির দশকে বঙ্গভবনের প্রবেশপথে ফোয়ারায় স্থাপিত তার ‘পাখি পরিবার’ ভাস্কর্যটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। গুলশানের ইউনাইটেড ভবনের প্রবেশপথে তার ‘পাখি’র বিমূর্ত উড়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তার ‘শান্তির পাখি’ অন্য এক আকাঙ্খার কথা বলে। বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবনে হামিদুজ্জামান খান প্রায় ২০০ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন এবং তার ৪৭টি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন এবং ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com