স্টাফ রিপোর্টার ::
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ, আহত ও বন্যাদুর্গতদের জন্য দোয়া এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে পতিত স্বৈরশাসক ও তার সহযোগীসহ সকল অপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহ¯পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শায়খুল হাদীস মাওলানা মামুনুল হক।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত এবং বৈষম্যহীন আগামীর বাংলাদেশ হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমৃদ্ধশালী একটি নতুন বাংলাদেশ। এই জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে কাজ করতে হবে।
আল্লামা মামুনুল হক আরও বলেন, সকলে মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন, তা রক্ষা করাও কঠিন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ছিনতাই করা হয়েছিল। ’৭১ সাল থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ছিল এক দলীয় বাকশাল। তিনি বলেন, আলেম সমাজের নেতৃবৃন্দ সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করতে হবে। যাতে আগামীর বাংলাদেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ হিসাবে পরিণত হয়।
মামুনুল হক বলেন, দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মের কাজ, বাসস্থান ও চলাফেরা নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা করা হবে। হাসিনা সরকারের আমলের মতো আর সংখ্যালঘু নির্যাতনের নাটক মঞ্চস্থ হবে না এ দেশে। তিনি বলেন, বিগত ৫ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে দেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। ঘটবেও না। সবাই সচেতন থেকে কাজ করবেন।
মামুনুল হক বলেন, সকল ইসলামী সংগঠনকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী বাদী প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের তাদের অন্যায় কাজের জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী বা দালাল হিসাবে কাজ করেছেন তাদের অন্যায় কথায় ব্যবহৃত হয়েছেন। তা আর করবেন না। জনগণ আপনাদের সহযোগিতায় থাকবে।
তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরের রাজনীতি ছিল প্রতিশোধের এবং অঙ্গরাজ্য প্রতিষ্ঠায় বিভাজনের রাজনীতি। ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে শুধু প্রতিশোধ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। নিজের ক্ষমতায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নিজে ক্ষমতায় থেকেছেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বাবার ভাস্কর্য নির্মাণ না করতে বলেছিলাম আমরা। কারণ এই মূর্তিগুলো তার বাবার অপমানের কারণ হতে পারে। আরও বলেছিলাম, আপনার টাকায় আপনার বাবার মূর্তি নির্মাণ করে ঘরে রেখে দিন। আমাদের টাকা অপচয় করবেন না। তখন মানেন নি তিনি।
মামুনুল হক অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিটি হত্যাকা-ের বিচার করতে হবে। এদেশের মাটিতে শেখ হাসিনাকে টেনে এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে যত প্রকারের দুর্নীতি হয়েছে, দোষীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আপনাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। তিনি একটি সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে সকলে মিলে উপদেষ্টাদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা মুফতি আজিজুল হক। গণসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনী, শায়খুল হাদিস মাওলানা জালাল উদ্দিন, জেলা খেলাফত মজলিসের সাধারণ স¤পাদক হাফিজ সৈয়দ জয়নুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায়, আহতদের সুস্থতা দানে এবং দেশে শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত পেশ করা হয়।