
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার একটি অন্যতম ভিত্তি - সার্জিক্যাল সামগ্রী, এই অর্থ বছর শেষে এসেও যখন পৌঁছেনি, তখন প্রশ্ন উঠে প্রশাসনের দায়বদ্ধতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির গভীরতা নিয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার এমএসআর (মেডিকেল অ্যান্ড সার্জিক্যাল রিএজেন্ট) সামগ্রীর টেন্ডার দেয়া হয়েছিল, কিন্তু বছরের শেষ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও এসব জরুরি পণ্য হাসপাতালের মজুদের ঘরে এসে পৌঁছায়নি। অথচ বিল পরিশোধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এমএসআর পণ্যের অভাবে সাধারণ রোগীদের বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে গজ, ব্যান্ডেজ, সুই-সুতা কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই বাস্তবতা চিকিৎসা সেবাকে ‘ব্যবসা’তে পরিণত করেছে। এতে যেমন সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।
অবাক করার বিষয় হলো, একাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব এই অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। ছাত্রদল, বিএনপি এবং জাসদ নেতারাও স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ তুলেছেন যে- এটি কেবল অব্যবস্থাপনা নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দুর্নীতির চিত্র। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে আগেই অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন হলো- এই বারবারের অনিয়ম কেন চলতেই থাকবে? কেন কোনো শাস্তি হয় না? কেন জনস্বাস্থ্য, যা সবচেয়ে মৌলিক অধিকার, সেখানে এমন নির্লজ্জ বরাদ্দ লোপাট চলবে?
এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই আমরা। শুধু তদন্ত করলেই চলবে না, তা হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং সময়বদ্ধ। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের বর্তমান সিন্ডিকেট ভেঙে সেখানে একটি জবাবদিহিমূলক, জনগণনির্ভর ও সেবাকেন্দ্রিক প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
আমরা মনে করি, যদি স্বাস্থ্য খাতে এই ধরণের দুঃসাহসিক দুর্নীতি চলতেই থাকে, তবে শুধু সুনামগঞ্জ নয়, পুরো দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। জনগণের টাকা লুটের হিসাব জনগণ চাইবেই এবং এবার তার উত্তরদাতা হতে হবে সরকারকেই।