
সুনামগঞ্জ জেলার নদনদীগুলো একসময় জীবন ও জীবিকার আধার ছিল। আজ সেগুলো হয়ে উঠেছে লুটের সা¤্রাজ্য। প্রশাসনের নাকের ডগায়, এমনকি জনতার চোখের সামনেই বালু-পাথরের অবাধ লুট চলছে। চেলা নদীর তীর কেটে দিনের আলোয় বালু তোলা কিংবা ধোপাজানের সুরমা নদীতে রাতভর ট্রাক, ভাইব্রেটার ও ‘জাদু মেশিন’-এর তা-ব - সব কিছুই যেন নৈরাজ্যের প্রদর্শনী।
দোয়ারাবাজারের নরসিংপুর ইউনিয়নের সারপিনপাড়ায় চেলা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের চিত্র শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পুরো জেলার নদীতীরবর্তী জনপদের জন্য একটি ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। এই অবৈধ কর্মকা-ের ফলে নদীভাঙনের মাত্রা এতটাই তীব্র হয়েছে যে, মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমি হারিয়ে জীবিকা সংকটে পড়ছেন কৃষকরা। অথচ স্থানীয় প্রশাসন দায়সারা জবাব ছাড়া কিছুই দিচ্ছে না।
অন্যদিকে, ধোপাজানের সুরমা নদীতে চলছে আরও বড় আকারে লুটপাটের মহোৎসব। সন্ধ্যা নামলেই আলোকিত হয় নদীপথ, শব্দ করে চলে অবৈধ ‘জাদু মেশিন’ বা ড্রেজার মেশিন, ট্রাকে করে নদীর তীরে জমা হয় পাহাড়সম বালু ও পাথর। পরে সেগুলো নদীপথেই পাচার হয়। আইন, অনুমোদন বা পরিবেশের কোনো তোয়াক্কা নেই। একে ব্যঙ্গ করে সাধারণ মানুষ বলছে- ‘জ্বীনপরীর লীলাখেলা’।
প্রশ্ন জাগে - এই লীলাখেলা তাহলে কারা চালাচ্ছে? স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের মদদেই সক্রিয় হয়েছে এই লুটপাট সিন্ডিকেট।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, খনিজ স¤পদ উত্তোলন নীতিমালা এবং নদী ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বাস্তব চিত্র বলছে, আইন যেন কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। জনগণের অভিযোগ- প্রতিবাদ করলে হুমকি আসে। মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পরও নেই দৃশ্যমান অভিযান বা জবাবদিহি।
অতঃপর প্রশ্ন থেকেই যায়- এ দায় কে নেবে? এই অনিয়ম ও দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে এখনই। নয়তো সুনামগঞ্জের নদীগুলো অচিরেই হারিয়ে যাবে লোভের গহ্বরে। জনপদ রক্ষা, কৃষিজমি সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে বালু-পাথর লুটের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক অভিযান, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।