শহীদনূর আহমেদ, জামালগঞ্জ থেকে ফিরে ::
বয়সের ভারে নুব্জ্য গোলবাহার আফিন্দী। বয়স ৭৬-এর কোঠায় পা দিয়েছে। প্রতিদিনই বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে নিজ মালিকানাধীন জমি দেখতে আসেন এ বৃদ্ধা। প্রয়াত স্বামী আব্দুস সোবহান আফিন্দীকে স্মরণ করে ফেলেন চোখের পানি। পরিত্যক্ত জমির মালিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা প্রশাসনের সাথে মামলা চলায় অফিস আদালতে ঘুরতে ঘুরতে শরীরে ক্লান্তির চাপ এই নারীর।
ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মোকদ্দমায় (৪৭/২১ইং) নিজের পক্ষে রায় পেয়েও অদৃশ্য কারণে জমির মালিকানা বুঝে পাননি বৃদ্ধা গোলবাহার। সর্বশেষ প্রতিকার চেয়ে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত বৃদ্ধা গোলবাহারের পক্ষে খতিয়ান সংশোধনের রায় প্রদান করেন। কিন্তু এ রায় কার্যকর না করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এবার উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জমি বুঝে পেতে জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন গোলবাহার আফিন্দী। গেল ২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বরাবরে আবেদন করেন তিনি।
যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল (১৫/২১ইং) মোকদ্দমা রায় ও ডিক্রির অনুকূলে খতিয়ান সংশোধন জন্য ২০২৩ সালের ৫ জুলাই জামালগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে আবেদন করে নামজারি ও জমা খারিজ মোকদ্দমা (৪৫/২৩-২৪ইং) এবং মিস কেইস (নং ১৫/২৩-২৪ইং) ভুক্ত হয়ে সময়ে সময়ে হাজিরা দিলেও রহস্যজনক কারণে খতিয়ান সংশোধন না করে সময়ক্ষেপণ করায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ে উচ্চ আদালতের রেকর্ড সংশোধনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি করেন গোলবাহার আফিন্দী।
ভুক্তভোগী গোলবাহার আফিন্দী বলেন, আমি বয়স্ক মানুষ। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখল করেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। আমরা সকল কাগজপত্র বৈধ। দীর্ঘদিন জমির উপর খাজনা দিয়ে আসছি। মালিকানা বুঝে পেতে তহশীল অফিস, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক, ট্রাইব্যুনাল মামলা, হাইকোর্ট কোনো জায়গা বাদ রাখিনি। ট্রাইব্যুনাল মামলা ও হাইকোর্টে রায় থাকার পরও আমার জায়গার খতিয়ান সংশোধন করে দেয়া হচ্ছে না। মৃত্যুর আগে ছেলে সন্তানকে সম্পত্তি বণ্টন করে দিতে চাই। আমি ন্যায়বিচার প্রত্যাশী। আশা করি জেলা প্রশাসক আমার স্বত্ত্ব বুঝিয়ে দিবেন।
আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও জমির মালিকানা বুঝিয়ে না দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুন নূর বলেন, আমি ৪ মাস হয় দায়িত্ব নিয়েছি। ব্যাপারটি আমি তেমন জানিনা। তবে কাগজপত্র নিয়ে ভুক্তভোগী দেখা করলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, একটি আবেদন আমার কাছে এসেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।