
সুনামগঞ্জসহ আশপাশের গ্রাম ও শহরে পেশাদার চোরচক্রের সক্রিয়তা জনজীবনকে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কে ফেলেছে। রাত নামলেই কোথাও না কোথাও চুরির ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ প্রতিরাতেই নিজের ঘর, দোকান কিংবা জীবনযাপন সুরক্ষিত রাখার চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। বাসাবাড়ি, মুদি দোকান, সিএনজি গ্যারেজ, এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত যেন নিরাপদ নয়।
এই চোরচক্র শুধু স্থানীয় নয়, বরং আন্তঃউপজেলা পর্যায়ের সুসংগঠিত অপরাধচক্র হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চুরি হওয়া জিনিসের তালিকা শুধু মোবাইল, স্বর্ণালংকার কিংবা নগদ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, চুরি যাচ্ছে গরু-ছাগল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা এবং দোকানের মূল্যবান পণ্যসামগ্রীও। চুরির ধরণ ও পরিকল্পনা দেখে একথা বলাই যায়- এরা একেবারেই পেশাদার এবং অভিজ্ঞ।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের শুধু ‘তৎপর থাকার কথা বলাই’ যথেষ্ট নয়, বরং তা হতে হবে দৃশ্যমান ও ফলপ্রসূ। জনগণের দাবি- সাম্প্রতিক চুরির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চোরচক্রকে আইনের আওতায় আনা এবং তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, গ্রামীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও জনমুখী করতে হবে। গ্রাম পুলিশদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনা প্রণয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে।
মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিকদের মতো আমরাও মনে করি- আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি বাড়ানো, রাত্রিকালীন যৌথ টহল চালু, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং জনগণকে সাথে নিয়ে কমিউনিটি ওয়াচ কার্যক্রম চালু করা এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে সাময়িক সময়ের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তাও বিবেচনায় আনা যেতে পারে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে।
একটি রাষ্ট্র তখনই সত্যিকার অর্থে নিরাপদ হয়ে ওঠে, যখন তার প্রতিটি নাগরিক নিজের ঘরে, দোকানে ও পথে নির্ভয়ে থাকতে পারে। সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এখন প্রয়োজন নিরলস প্রশাসনিক তৎপরতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সচেতন নাগরিক সমাজের সম্মিলিত ভূমিকা।
পেশাদার চোরচক্রের কাছে হার মানা কোনো বিকল্প নয় - এখনই সময় দৃঢ়, সুসংগঠিত ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ার।