
তানভীর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জের সড়কপথে দুর্ঘটনা থামছেই না। জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা দিনদিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে দায়ী করছেন সচেতন ব্যক্তিবর্গ। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও ঘটছে ছোট-বড় অনাকাঙ্খিত সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনায় অকালে ঝরছে মানুষের প্রাণ। শুধুমাত্র গেল মে মাসে সুনামগঞ্জ জেলায় ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ’র তথ্য মতে, চলতি বছরের (২০২৫ইং) ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সাড়ে ৫ মাসে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩৩ জন মানুষ।
এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগেই যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বাসের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে মোটরসাইকেল ও বাসের সংঘর্ষ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, মিনিবাস ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ছাড়াও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যানবাহন খাদে পড়া বা বিভিন্ন স্থাপনায় ধাক্কা লাগার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
চলতি বছরের ২৭ মে, দুপুরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনের সড়কে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ একই পরিবারের চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলন্ত অবস্থায় সামনের চাকা আকস্মিকভাবে খুলে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাটি সড়কের পাশে কলেজের নিচু মাঠের খাদে ছিটকে পড়ে। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় ওই অটোরিকশা। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেন স্থানীয়রা। সেখানে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঐ সিএনজি চালিত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না বলে জানা যায়।
অন্যদিকে ২২ মে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ বাজারে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক পিকআপ চালক বেপরোয়া গতিতে পিক-আপ চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়।
এসময় মোটরসাইকেলে থাকা চালকসহ ২ জন গুরুতর আহত হন। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা করিয়েছেন।
অপরজন সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ: যানবাহন রেজিস্ট্রেশন কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস নবায়ন বা রুট পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জেলা বিআরটিএ অফিসের বিরুদ্ধে প্রায়শই ওঠে। এটিও দুর্ঘটনার একটি পরোক্ষ কারণ। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে অদক্ষ চালকরা জেলা বিআরটিএ অফিস থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন এবং ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোও সহজেই ফিটনেস সার্টিফিকেট পাচ্ছে, যা সড়ককে আরও অনিরাপদ করে তুলছে। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি বিআরটিএ কর্মকর্তাদের।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো বা এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে চালকদের পাশাপাশি অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলে দিনদিন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হোসেন বখত চত্বর এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসনাত বলেন, সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলায় দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যা জনমনে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলো কেবল প্রাণহানি নয়, অসংখ্য পরিবারে বয়ে আনছে অপূরণীয় ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদী দুঃখ-যন্ত্রণা। একটি নিরাপদ সুনামগঞ্জ গড়ার লক্ষ্যে পরিস্থিতির কারণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো প্রশাসনের উদাসীনতা। প্রয়োজনীয় তদারকি ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গাফিলতি, দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ধীরগতি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব সড়ক নিরাপত্তাকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ট্রাফিক আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর ও সক্রিয় হতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও কঠোরতা আনতে হবে, যেন অদক্ষ চালকদের সড়কে নামার সুযোগ না থাকে। পাশাপাশি, অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
শহরের বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে হবে। দিনদিন যেভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমরা চিন্তিত। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, নিয়মিত ছোট-ছোট অভিযান হচ্ছে, আমরা বিভিন্ন যানবাহন আটক ও জরিমানা করছি। কিন্তু যখনই যানবাহন আটক করি তখনই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সুপারিশ আসে গাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য। অনেকসময় বাধ্য হয়ে সুপারিশের কারণে ছেড়ে দিতে হয়। এই কর্মকর্তার ভাষ্য, তদবির-সুপারিশ তাঁদের পেশাগত কাজে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হানিফ মিয়া বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে লোকবল স্বল্পতা এবং জনসচেতনতার অভাবে শতভাগ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা ১০৮ মোতাবেক ৮৯(২) ধারায় আমরা ২০০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করছি। একই সাথে অদক্ষ কোনো চালক যানবাহন চালালে আমরা সেই গাড়ি আটক করার পর জরিমানা করে যানবাহনের প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করে থাকি। সেই সাথে তাদেরকে শর্ত দেই যে, অদক্ষ বা অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের কাছে যেন যানবাহন তাঁরা না দেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) আবদুর রশীদ বলেন, আমরা চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং রাস্তার পাশের স্কুলগুলোতে নিয়মিত সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করছি। বিভিন্ন সময়ে চালকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। গাড়ির মালিকদেরকে অদক্ষ বা ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার নির্দেশনাও আমরা দিয়ে থাকি। সড়কে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা।
সুনামগঞ্জের সড়কপথে দুর্ঘটনা থামছেই না। জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা দিনদিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে অদক্ষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে দায়ী করছেন সচেতন ব্যক্তিবর্গ। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও ঘটছে ছোট-বড় অনাকাঙ্খিত সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনায় অকালে ঝরছে মানুষের প্রাণ। শুধুমাত্র গেল মে মাসে সুনামগঞ্জ জেলায় ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ’র তথ্য মতে, চলতি বছরের (২০২৫ইং) ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সাড়ে ৫ মাসে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩৩ জন মানুষ।
এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগেই যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বাসের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, সিএনজি চালিত অটোরিকশার সাথে মোটরসাইকেল ও বাসের সংঘর্ষ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, মিনিবাস ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ছাড়াও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যানবাহন খাদে পড়া বা বিভিন্ন স্থাপনায় ধাক্কা লাগার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
চলতি বছরের ২৭ মে, দুপুরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনের সড়কে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ একই পরিবারের চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলন্ত অবস্থায় সামনের চাকা আকস্মিকভাবে খুলে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাটি সড়কের পাশে কলেজের নিচু মাঠের খাদে ছিটকে পড়ে। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় ওই অটোরিকশা। দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেন স্থানীয়রা। সেখানে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঐ সিএনজি চালিত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না বলে জানা যায়।
অন্যদিকে ২২ মে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ বাজারে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক পিকআপ চালক বেপরোয়া গতিতে পিক-আপ চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়।
এসময় মোটরসাইকেলে থাকা চালকসহ ২ জন গুরুতর আহত হন। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা করিয়েছেন।
অপরজন সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ: যানবাহন রেজিস্ট্রেশন কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস নবায়ন বা রুট পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জেলা বিআরটিএ অফিসের বিরুদ্ধে প্রায়শই ওঠে। এটিও দুর্ঘটনার একটি পরোক্ষ কারণ। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে অদক্ষ চালকরা জেলা বিআরটিএ অফিস থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন এবং ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোও সহজেই ফিটনেস সার্টিফিকেট পাচ্ছে, যা সড়ককে আরও অনিরাপদ করে তুলছে। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি বিআরটিএ কর্মকর্তাদের।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো বা এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে চালকদের পাশাপাশি অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলে দিনদিন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হোসেন বখত চত্বর এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসনাত বলেন, সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলায় দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যা জনমনে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলো কেবল প্রাণহানি নয়, অসংখ্য পরিবারে বয়ে আনছে অপূরণীয় ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদী দুঃখ-যন্ত্রণা। একটি নিরাপদ সুনামগঞ্জ গড়ার লক্ষ্যে পরিস্থিতির কারণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো প্রশাসনের উদাসীনতা। প্রয়োজনীয় তদারকি ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গাফিলতি, দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ধীরগতি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব সড়ক নিরাপত্তাকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ট্রাফিক আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর ও সক্রিয় হতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও কঠোরতা আনতে হবে, যেন অদক্ষ চালকদের সড়কে নামার সুযোগ না থাকে। পাশাপাশি, অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
শহরের বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে হবে। দিনদিন যেভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে তাতে আমরা চিন্তিত। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, নিয়মিত ছোট-ছোট অভিযান হচ্ছে, আমরা বিভিন্ন যানবাহন আটক ও জরিমানা করছি। কিন্তু যখনই যানবাহন আটক করি তখনই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সুপারিশ আসে গাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য। অনেকসময় বাধ্য হয়ে সুপারিশের কারণে ছেড়ে দিতে হয়। এই কর্মকর্তার ভাষ্য, তদবির-সুপারিশ তাঁদের পেশাগত কাজে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হানিফ মিয়া বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে লোকবল স্বল্পতা এবং জনসচেতনতার অভাবে শতভাগ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারা ১০৮ মোতাবেক ৮৯(২) ধারায় আমরা ২০০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করছি। একই সাথে অদক্ষ কোনো চালক যানবাহন চালালে আমরা সেই গাড়ি আটক করার পর জরিমানা করে যানবাহনের প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করে থাকি। সেই সাথে তাদেরকে শর্ত দেই যে, অদক্ষ বা অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের কাছে যেন যানবাহন তাঁরা না দেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) আবদুর রশীদ বলেন, আমরা চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং রাস্তার পাশের স্কুলগুলোতে নিয়মিত সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করছি। বিভিন্ন সময়ে চালকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। গাড়ির মালিকদেরকে অদক্ষ বা ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার নির্দেশনাও আমরা দিয়ে থাকি। সড়কে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা।