শহীদনূর আহমেদ ::
অনুকূল আবহাওয়ায় বোরো অধ্যুষিত হাওরজেলা সুনামগঞ্জে এবার বেড়েছে রোপা আমনের চাষ। বোরো ধানের চেয়ে ঝুঁকি কম হওয়া ও ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় আমান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। গেল মৌসুমের চেয়ে এবার অতিরিক্ত ১০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর, যা অন্য বছরের চেয়ে ১০০ হেক্টর বেশি। ইতোমধ্যে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ৬৩% জমিতে চারা রোপণ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। অনুকূল আবহাওয়া ও আমন চাষে কৃষকের আগ্রহ থাকায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা, জাহাঙ্গীর নগর ও গৌরারং ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, রোপা আমন চাষে ব্যস্ত রয়েছেন চাষীরা। জমিতে হাল চাষ, সার-কীটনাশক ব্যবহার, বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, চারা রোপণ, সেচসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার সময়ে সময়ে বৃষ্টিপাত ও বন্যা কিংবা প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় অন্যবারের চেয়ে একটু আগে আমন চাষাবাদ শুরু হয়েছে হাওরে। আর সপ্তাহ ১০ দিন সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ হাওরে শতভাগ চাষাবাদ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শ্রমিকের মজুরি, জ্বালানি তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি থাকায় এবার চাষাবাদ ব্যয় বেড়েছে। ধানের ফলন ভালো হলে উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লাভবান হওয়ার আশা তাদের।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের ইচ্ছারচর গ্রামের মাহমদ আলী বলেন, আমার নিজস্ব জমি নাই। তবে ৬ কেয়ার জমি বর্গা নিয়ে আমন চাষ করছি। প্রতিকেয়ার জমিনে ৫০০০-৫৫০০ টাকা খরচ পড়ছে। আবহাওয়ার অবস্থা ভালা আছে, যদি ধানের ফলন ভালো হয় তাইলে হয়তো লাভ করতাম পারমু।
একই এলাকার আমন চাষী রনজিৎ দাস বলেন, এখন সবতার দাম বাড়তি, বীজ, সার, কীটনাশক, ডিজেল সবতার দামই বাড়তি। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। তাই ভালা ফলন না হইলে ফরতায় পড়তো নায়। সবতা ওখন উপরওয়ালার ইচ্ছা। যদি ফলন ভালা হয়, তাইলে ঝি-সন্তান লইয়া ভালা থাকতাম পারমু।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এবার জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৮৩,৩৮০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চালের দিক দিয়ে ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। তিনি বলেন, আমন চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আশা করছি এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হবে।