
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশে অব্যাহত ‘পুশইন’ চালানোর প্রবণতা গভীর উদ্বেগজনক মোড় নিচ্ছে। সিলেটের পর এবার সুনামগঞ্জ সীমান্তে ১৬ জন বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক ঠেলে পাঠানোর ঘটনা দেশীয় নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। ছাতক উপজেলার নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে এসব নাগরিককে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রবেশ করিয়ে দেয় বিএসএফ। বিজিবির তৎপরতায় তারা দ্রুত আটক হলেও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যেভাবে আমরা কূটনৈতিকভাবে সরব হওয়া উচিত ছিল, তা এখনও দৃশ্যমান নয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আটককৃতদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক হলেও তারা দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করছিলেন। ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হলে তা অবশ্যই আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ও দুই দেশের সমঝোতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কিন্তু বিএসএফ যেভাবে রাষ্ট্রীয় সমর্থনে রাতের অন্ধকারে মানুষ ঠেলে দিচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সৌহার্দ্য নীতির চরম লঙ্ঘন।
প্রকৃতপক্ষে, পুশইন ঠেকাতে বিজিবি সুনামগঞ্জ সীমান্তে সতর্কতা ও টহল বাড়ালেও শুধু বাহ্যিক নজরদারির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি তুলে ধরা।
এখানে দুটি স্তরে আমাদের প্রতিক্রিয়া জরুরি- প্রথমত, কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ এবং ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌথ পদ্ধতিতে এসব নাগরিকদের পুনর্বাসনের পথ খোঁজা। দ্বিতীয়ত, দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি না দেওয়ার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকায় কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও নিরাপত্তার মানোন্নয়ন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বারবার সীমান্তে গুলিবর্ষণ, হত্যা কিংবা পুশইন - এই ঘটনাগুলো একতরফা আচরণের ইঙ্গিত দেয়। প্রতিবারের মতো নীরব প্রতিবাদ নয়, এবার প্রয়োজন কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও রাষ্ট্রীয় অবস্থান পুনর্বিবেচনা।
আমরা মনে করি, দেশের স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে আপসের কোনো সুযোগ নেই। সীমান্তে পুশইনের মতো অমানবিক ও অবৈধ কর্মকান্ড রুখে দিতে সরকার, প্রশাসন ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে।