স্টাফ রিপোর্টার ::
ড্রেজার ব্যবসার নামে হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠেছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার যাত্রাপুর গ্রামের মো. শহীদ মিয়ার পুত্র। এ ব্যাপারে গত ২৪ জুলাই জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রূপক তালুকদার ও রতন তালুকদার। তারা দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের এলংজুড়ি গ্রামের মৃত রঞ্জিত তালুকদারের পুত্র।
জানাযায়, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে জেলা পুলিশ সুপার এমএন মোর্শেদ বিষয়টি দু’পক্ষকে নোটিশ করে জেলা পুলিশ সুপারের কক্ষে ডেকে এনে সালিশ বিচারে নিষ্পত্তি করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাসকে নির্দেশ দেন। কিন্তু রাজন কুমার দাস দীর্ঘ ১ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন পক্ষকে নোটিশ প্রদান করেননি। এ সুযোগে হাবিবুর রহমান বিভিন্ন মহলকে কাজে লাগিয়ে দিরাই-মদনপুর রাস্তার পাশে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পস্থানে থাকা দুটি ড্রেজার মেশিন সুকৌশলে সরিয়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে।
অভিযোগে উল্লেখ, ৩শত টাকার নন জুডিসিয়াল স্টাম্পে যথাক্রমে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে ব্যবসায়ী রূপক তালুকদার ও তার বড়ভাই দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রতন তালুকদার ড্রেজিং ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার শুরুতে ২০২১ইং সনের ১৩ মে হতে ৯ জুন পর্যন্ত পৃথক ৭টি নির্ধারিত তারিখে হাবিবুর রহমান, রূপক ও তার ভাই রতন তালুকদারের কাছ থেকে আগাম হিসেবে মোট ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নগদ ও বিকাশ মাধ্যমে গ্রহণ করে। পরবর্তীতে দিরাই-মদনপুর রাস্তা সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে মাটি ভরাটের কাজ চলমান অবস্থায় একই বছরের ৫ জুলাই হতে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে হাবিবুর রহমান এবং তার ম্যানেজার মো. মোক্তার হোসেন ও সবুজ মাহমুদ, ব্যবসায়ী ২ ভাই রূপক তালুকদার ও রতন তালুকদারের নিকট হতে নগদ ১ কোটি ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ১ শত ৫০ টাকা গ্রহণ করে। টাকা গ্রহণের এ হিসাব নির্ধারিত খাতায় হাবিব ও তার ২ ম্যানেজারের প্রাপ্তি স্বীকারসূচক স্বাক্ষরও রয়েছে। চুক্তি সম্পাদনের পর মালিকপক্ষের দেয়া ডিজিটাল ম্যাজারমেন্টের মাধ্যমে মোট ৩৪ লাখ ঘনফুট মাটি কাটা হয়েছে বলে তাদেরকে বিল প্রদান করা হয়। প্রতি ঘনফুট ২.৩০ টাকা হিসেবে মোট ৩৪ লক্ষ ঘনফুট মাটির মূল্য বাবত হাবিবুর রহমান পান ৭৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু হাবিবুর রহমান হাবিব, মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে ঠিক করতে হবে এবং পাম্প নষ্ট হয়ে গেছে ইত্যাদি মিথ্যা অজুহাতে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৫০ টাকা বেশি গ্রহণ করেন। যা হাবিবুর রহমানের নিকট ওই দুই ভাইয়ের পাওনা রয়েছে। উক্ত পাওনা মোট ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৫০ টাকা পরিশোধের জন্য তারা সদর থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের বিষয়টি সমাধানের জন্য সুনামগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন মেয়র নাদের বখতকে অনুরোধ করেন। ২০২৩ইং সনের ১৪ আগস্ট সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার সময়, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের কার্যালয়ে মেয়র নাদের বখত, উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশে বসলে মেয়র, রতন গংদের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য নির্দেশনা দিলে হাবিবুর রহমান ১৫ দিনের সময় প্রার্থনা করে। নির্ধারিত ১৫ দিন পরে ভুক্তভোগী ভ্রাতৃদ্বয় মেয়রের কাছে পুনরায় গেলে হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকায় চিকিৎসাধীন বলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করেন। ইতিমধ্যে প্রতারিত ভ্রাতাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা থেকে বিরত থেকে অন্য একটি প্রভাবশালী পক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে মাটি না কেটে গোপনে অতিরিক্ত টাকা রেটে অন্যত্র চোরাই পন্থায় মাটিকেটে ব্যবসা পরিচালনা করে হাবিবুর রহমান। রতন ভ্রাতাদ্বয় গোপনে মাটি কাটার প্রতিবাদ করলে হাবিবুর রহমান তাদের সাথে চুক্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে। পরে ২০২৩ইং সনের ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টার সময়ে শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ রতন কুমার তালুকদার ও হাবিবুর রহমানকে নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডস্থত এসএ পরিবহনের অভ্যন্তরে ২য় দফায় সালিশে বসেন। উক্ত সালিশে হাবিবুর রহমানের কাছে দুই ভ্রাতার ৩৮ লক্ষ ৭৮ হাজার ১৫০ টাকা পাওনা রয়েছে বলে হাবিব অকপটে স্বীকার করেন। সালিশে সিদ্ধান্ত হয় যে, ওই দুই ভ্রাতার পাওনা টাকা পরিশোধ না করার পূর্ব পর্যন্ত হাবিব অন্য কোথাও তার দুটি ড্রেজার মেশিন সরিয়ে নিতে পারবেনা। বিদ্যমান ড্রেজার দুটি দিরাই-মদনপুর রাস্তা সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ঘাটেই থাকবে। সালিশে দুই ভ্রাতার পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য ৫ নভেম্বর তারিখে নগদ ১ এক লক্ষ টাকা, ১২ লক্ষ টাকা করে দুটি ২৪ লক্ষ টাকার ব্যাংক চেক ও ৩০০ টাকা মূল্যের ৩টি নন জুডিসিয়েল স্টাম্পে লিখিত প্রদানের জন্য হাবিবুর রহমানকে রায় প্রদান করা হয়। এবং যাবতীয় পাওনা ২০২৩ইং সনের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করবে মর্মে নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু হাবিবুর রহমান হাবিব পাওনা টাকা দেই-দিচ্ছি বলে এখন পর্যন্ত সময় কালক্ষেপণ করার পাশাপাশি সালিশের রায় অমান্য করে বিদ্যমান দুটি ড্রেজারের মধ্যে ১টি ড্রেজার অন্যত্রে সরিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে সালিশীরা বিষয়টি জানতে পেরে প্রতারিত দুই ভ্রাতাকে অবগত করলে সালিশি ব্যক্তিদের পরামর্শে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা ও দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জগণকে অবহিত করে এবং সুনামগঞ্জ ২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার মাধ্যমে চরনারচর ইউপি সদস্য বকুল তালুকদারের জিম্মায় স্থানীয় শ্যামারচর বাজারে একটি ড্রেজার আটকে রাখা হয়। হাবিবুর রহমানের স্বীকারোক্তিসহ সালিশের অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড সহকারে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরও এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাননি দুই ভ্রাতা রূপক তালুকদার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার তালুকদার।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম নূরুলের নেতৃত্বে সেদিনকার ওই সালিশে প্রতারিত দুই ভাই রূপক তালুকদার ও রতন তালুকদারের আপন মামা মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস, শান্তিগঞ্জ থানার শিবপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম শিপন, জয়কলস গ্রামের সালিশি মোশাহিদ আহমদ, জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালাগুজা নিবাসী আবু হানিফ, দক্ষিণ আরপিননগর নিবাসী মমিনুল হক কালারচান ও জামতলা নিবাসী রাকিবুল ইসলাম দিলু ও উজানীগাঁও গ্রামের নজরুল ইসলামসহ শহরের গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত থাকলেও দফায় দফায় সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ড্রেজার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান এখন পর্যন্ত পাওনাদারগণের পাওনা পরিশোধ করা থেকে বিরত রয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কাউকে ঠকাইনি, প্রতারণাও করিনি।
হাবিবের ম্যানেজার মো. মোক্তার হোসেন ও সবুজ মাহমুদ জানান, হাবিবুর রহমানের কাছে রূপক ও রতন এ দুই ভ্রাতার পাওনার বিষয়টি সঠিক।
আশুগঞ্জ থানার সাংবাদিকরা জানান, হাবিবুর রহমান গত দুই যুগ ধরে এলাকাতে নেই। তিনি সিলেট এলাকায় সপরিবারে অবস্থান করে ড্রেজার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সালিশি মোশাহিদ আহমদ বলেন, হাবিবুর রহমান পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ না করে নানা জায়গায় মিথ্যা কথা বলে আরো অনেক লোকজনকে প্রতারিত করে যাচ্ছে। অবিলম্বে হাবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।