
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য পরিচালিত অভিযানটি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম দুরবস্থা ও নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র উন্মোচন করেছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বিদ্যমান, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
দুদকের অভিযানে উঠে এসেছে, কর্মকর্তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতি, দায়িত্বে অবহেলা, ওষুধ বিতরণে চরম গড়মিল, নি¤œমানের খাবার সরবরাহ এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। সবচেয়ে ভয়াবহ যে চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো- সরকারি ২-৩ কোটি টাকার ওষুধের ক্রয় সংক্রান্ত রেজিস্ট্রারের গায়েব হয়ে যাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগসাজশে তা তসরুপের প্রমাণ।
যেখানে সরকারি অর্থে বরাদ্দকৃত ওষুধ রোগীদের জন্য সরবরাহ হওয়ার কথা, সেখানে ওষুধ গুদামে থেকেও রেজিস্ট্রারে নেই, এবং রোগীরা তা পাচ্ছেন না- এটি শুধুমাত্র চরম অবহেলা নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত দুর্নীতির অংশ। তদুপরি, হাসপাতালের বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থাও কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কর্মচারীরা বিলম্বে এসে সময়ের আগেই দায়িত্ব ত্যাগ করছেন, অথচ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ।
এমন পরিস্থিতিতে দুদকের অভিযান প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী। কিন্তু কেবল অভিযান চালিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলেই চলবে না, বাস্তবিক জবাবদিহিতা ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ওষুধ ক্রয়, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জবাবদিহিতার অভাব রোগীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সমান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম প্রশাসনিক সচেতনতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে সরকারি অর্থ ও জনস্বাস্থ্য উভয়ই হুমকির মুখে পড়বে।
আমরা চাই, দুদকের এমন অভিযান ধারাবাহিকভাবে চালু থাকুক এবং তা যেন প্রতিকারমুখী ফল বয়ে আনে। হাসপাতাল শুধু একটি চিকিৎসাকেন্দ্র নয়, এটি মানুষের জীবন বাঁচানোর আশ্রয়। সেই আশ্রয়ে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কোনোভাবেই সহ্যযোগ্য নয়।
সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্যখাতকে বাঁচাতে হলে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুদকের প্রতিবেদন যেন আলমারির ফাইলে বন্দি না থেকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করে, সেই প্রত্যাশাই রইল।