পথে যেতে যেতে : পথচারী

আপলোড সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১২:১৬:০৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৭-০৫-২০২৫ ১২:১৬:০৯ পূর্বাহ্ন
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঘটে যায় কতো ঘটনা। সবকিছু পত্রিকার পাতায় আনা যায় না। তবে সংক্ষেপে কিছু কিছু বলতে হয়। গত সপ্তাহে জন্মবার্ষিকী ছিল কবি বিহারী লাল চক্রবর্তী ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের। মৃতুবার্ষিকী ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলফাত উদ্দিন মোক্তার সাহেব এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক চারুচন্দ্র চক্রবর্তী’র। তাদের সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়। কিন্তু কবি বিহারী লাল চক্রবর্তীকে নিয়ে তেমন লেখালেখি হয় না। তাই আমরা এই কবিকে তেমন জানি না। নতুন প্রজন্মের পাঠকরা এরকম কবিকে প্রায় ভুলেই থাকেন। আজকে বিহারী লাল চক্রবর্তীকে নিয়ে যৎসামান্য লেখার ইচ্ছা। কবি বিহারী লাল চক্রবর্তীকে গীতিকবিও বলা হয়ে থাকে। আমরা জানি গীতিকবিতায় রচয়িতার ব্যক্তি অনিচ্ছা-ইচ্ছার কথা বলা হয়ে থাকে। সেই অর্থে কবি বিহারী লাল চক্রবর্তী একজন গীতিকবি। তার জন্ম ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ মে উত্তর নিমতলা অক্ষয় দত্ত লেনে কোলকাতায়। পিতা দীননাথ চক্রবর্তীর পরিবার ছিল ব্রাহ্মণ্য। পরে এক সময় তারা চট্টোপাধ্যায় হয়ে যান। কবির ৪ বছর বয়সেই মারা যান তার মা। পিতামহের পরিবারেই লালিত-পালিত হন কবি। যথেষ্ট প্রতিভাধর কবি ছিলেন বিহারী লাল চক্রবর্তী। প্রায় ৮টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন তিনি। তার রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে ‘স্বপ্ন দর্শন’ (১৮৫৮)। এই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর তা ব্যাপক পরিচিতি পায়। তার ‘সুরবালা’ এক বিখ্যাত কবিতা। কবির অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘সংগীতশতক’ (১৮৬২), ‘বঙ্গসুন্দরী’ (১৮৭০), ‘নিসর্গ সন্দর্শন’ (১৮৭০), ‘বন্ধু বিয়োগ’ (১৮৭০), ‘প্রেম প্রবাহিনী’ (১৮৭০), ‘সারদা মঙ্গল’ (১৮৭৯) এবং সাধের আসন (১৮৮৯)। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘সারদা মঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থটি অধিক পঠিত এবং শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘আর্যদর্শন’ পত্রিকায় ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে। বিহারী লাল চক্রবর্তী একজন উচ্চমার্গীয় কবি ছিলেন, যাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘কাব্যগুরু’ হিসেবে সম্বোধন করতেন। বলা হয়ে থাকে যে, কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের পর বাংলা কবিতাকে যিনি সঠিক রূপদান করেছেন তিনি কবি বিহারী লাল চক্রবর্তী। বিহারী লাল চক্রবর্তী ছোটবেলায় নিজ গৃহেই পড়াশোনা করেছেন। এ সময় তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। পরে কোলকাতায় সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা করেন। বিহারী লাল চক্রবর্তী ছোটকালে প্রচ- দুরন্তপনা ছিলেন। বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতেন। যেখানে যাত্রাপালা হতো, নাটক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো সেখানেই ছুটে যেতেন। দারুণ প্রতিভাধর এই কবি ১৮৯৪ সালের ২৪ মে কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের সুনামগঞ্জের গর্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফাত উদ্দিন মোক্তার সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল এ সপ্তাহের ২৩ মে। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা। বিশিষ্ট সাহিত্যিক চারুচন্দ্র চক্রবর্তী মৃত্যুবার্ষিকী ছিল এ সপ্তাহেরই ২৫ মে। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ মোতাবেক ইংরেজি ১৮৯৯ সালের ২৪ মে। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পরপরই যার অবস্থান নির্ণয় করা হয় তিনি আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি একাধারে কবি, ছড়াকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, প্রবন্ধকার, ছোট গল্পকার, গীতিকার নানা বিষয়ে লেখালেখি করে বাংলা সাহিত্যকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার রচিত গান শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে আছে। শ্যামা সংগীত, প্রেম, বিচ্ছেদ, কীর্তন, রাগপ্রধান প্রভৃতি অঙ্গের গান আজও ভক্ত হৃদয়ে অমর হয়ে আছে। ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রি. ঢাকার পিজি হাসপাতালে আমাদের এই জাতীয় কবির জীবনাবসান ঘটে। কবির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com