
“যারা ঘুষ খায়, তারা অমানুষ” - সুনামগঞ্জে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আয়োজিত গণশুনানিতে কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদের এ বক্তব্য শুধু তাৎক্ষণিক ক্ষোভ নয়, এটি দেশের কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ, অভিজ্ঞতা ও হাহাকারকে প্রতিনিধিত্ব করে।
দুর্নীতি এখন আর কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি বা পেশার মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বনি¤œ স্তর থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির করাল ছায়া বিস্তার করে আছে। এর ভয়াবহ পরিণতিই দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ প্রায় সব খাতকে আজ হুমকির মুখে ফেলেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে জনগণের মুখে উচ্চারিত অভিযোগগুলো আমাদের আত্মসমীক্ষার সুযোগ করে দেয়। জনগণ সরাসরি হাসপাতাল, পৌরসভা, নির্বাচন কার্যালয়, বিআরটিএ, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, হয়রানি ও অনিয়মের যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তা নতুন কিছু নয়, কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিশেষভাবে ভূমি-সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগের আধিক্য আমাদের ভাবতে বাধ্য করে- যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকারের সঙ্গে সরাসরি স¤পৃক্ত, সেই খাতে এতো অনিয়ম কীভাবে সম্ভব? এ থেকে পরিষ্কার, ঘুষ আর লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সাধারণ মানুষের ন্যায্য সেবা পাওয়াকে দুরূহ করে তুলে।
দুদক কমিশনারের আহ্বান ছিল- ঘুষ দেবেন না, প্রতিবাদ করুন। আমরা একমত, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সেবা পেতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ঘুষ দেওয়া ‘বিকল্পহীন বাধ্যতা’ হয়ে দাঁড়ায়। একা প্রতিবাদ করে প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এই জায়গায় প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কঠোর নজরদারি, জবাবদিহিতা ও নির্ভীক আইন প্রয়োগ।
দুদক যদি চায় “একদিন যেন দুদকের প্রয়োজন না থাকে” তবে তাদের কার্যক্রমকে আরও বেশি জোরদার করতে হবে। শুধু সচেতনতামূলক গণশুনানি নয়, দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক শুদ্ধাচার ও নাগরিক সচেতনতাই পারে দুর্নীতির এই দানবকে প্রতিরোধ করতে।
আমরা আশা করি, সুনামগঞ্জের গণশুনানি একটি বার্তা দেবে- দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুধু কাগজে কলমে নয়, মাঠপর্যায়ে বাস্তব প্রয়োগেরও দাবি রাখে। মানুষ যখন দেখে অভিযোগের প্রতিকারে প্রতিফলন নেই, তখন আস্থা হারায়। এ আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি।