ভোটের দিনক্ষণ আদায়ের ছক কষছে বিএনপি

আপলোড সময় : ২১-০৫-২০২৫ ০৮:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২১-০৫-২০২৫ ০৮:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আদায় করতে চাইছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনাও সাজাচ্ছে দলটি। আন্দোলনে নামার পর যেন সংঘাত ও সহিংসতা সৃষ্টি করে তৃতীয় কোনো ধরনের সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে দলটি। তবে চূড়ান্ত কর্মসূচি নেওয়ার আগ পর্যন্ত বক্তব্য-বিবৃতিতে সরকারকে সতর্ক করতে থাকবে। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাংশ ক্ষমতায় থাকতে নানা অজুহাতে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের এ চেষ্টা সফল হলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে। এমন শঙ্কা থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনের ¯িপরিট ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামার চিন্তা করছে। কী ধরনের কর্মসূচি করা যায়- তা নিয়ে দলটির মাঝে আলোচনাও চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ৫ আগস্ট যদি হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে না যেতেন, তা হলে নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতো। আমাদের নির্বাচন কমিশনও তো মোটামুটি প্রস্তুত। আমরা কীসের প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করছি? ১৭ বছর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন, তা হলে কিন্তু আবার রাজপথে নামবে। আমাদের ওপর জনগণ সেই চাপ কিন্তু দিয়ে যাচ্ছে। আবার মানুষ প্রশ্ন শুরু করছে, বিএনপি কী করবে? তবে, চূড়ান্তভাবে রাজপথে আন্দোলনে নামার আগে বিএনপির পক্ষ নানা বক্তব্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করারও চেষ্টা চলছে। গত শনিবার রাতে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। জনগণের কাছে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পতিত পলাতক স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা সহজ হবে না। একই দিন বিকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে খুলনায় এক সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক? যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণসহ বিদেশে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তিনি এও বলেছেন, কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে, বেশি সংস্কার চাইলে জুনে নির্বাচন হবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা এবং ছাত্রদের দল এনসিপি নেতাদের বক্তব্য এবং দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাঝে ধোঁয়াশা ও নানা শঙ্কা দেখা দেয়। সর্বশেষ সরকারের তরফ থেকে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করার পর সেই শঙ্কা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার ব্যর্থ হলে অথবা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা না করলে গণতন্ত্র বড় ধরনের হুমকিতে পড়বে। সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশ বিরাজনীতিকরণ বা তাদের মদদপুষ্ট কোনো একটি কিংস পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাইছে। এই চেষ্টা যেন সফল না হয়, সে জন্য করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নেতারা নির্বাচনের দিনক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে, সেই আন্দোলন কোনো অবস্থায় যেন সংঘাতের দিকে না যায় সেই ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার পক্ষে মতামত এসেছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর প্রথমে যমুনার সামনে এবং পরে শাহবাগে অবস্থান নিলে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই পদ্ধতিতে বিএনপি ও তার মিত্ররা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি দিতে পারে। ওই নেতার মতে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাকে কেন্দ্র করে শাহবাগ, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, মৎস্য ভবন সড়কে অবস্থান নেওয়া হয়, সরকার তখন কী করবে? অবশ্যই তারা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। সেই পথে আমরা যেতে চাই না। সরকারের সিদ্ধান্ত দেখেই তারা পথ চলতে চান। নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে সম্মানের সাথে বিএনপি বিদায় জানাতে চায় বলে জানান ওই নেতা। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, তার মতে ড. ইউনূসও দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নিতে চান। সেক্ষেত্রে তার আশপাশে কিছু বাধা আছে। বিএনপি যদি সঠিকভাবে চাপ তৈরি করতে পারে, সেই বাধাও কেটে যাবে। বিএনপিসহ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে বলে সম্প্রতি তারেক রহমান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি এও বলেন, সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যায়, সরকার কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। বরং সরকার জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণাকে সুকৌশলে অল্প সংস্কার বেশি সংস্কার- এ ধরনের একটি অভিনব শর্তের বেড়াজালে আটকে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বাড়ছে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নামছে। গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকার নানা ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দফা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা, আদালতের রায় অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে শপথবাক্য পাঠ না করানো, আলোচনা ছাড়া মধ্যরাতে এনবিআর ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তারা মনে করছেন, খুব দ্রুত সময়ে নির্বাচন না হওয়ার লক্ষণ। বিএনপির এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে দেখেছি একটা ইস্যু দিয়ে আরেকটি ইস্যুকে চাপা দিতে। এই সরকারও সেই পথে আছে বলে মনে করেন ওই নেতা। এতে করে তাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা শঙ্কা কাজ করছে। এখন আবার আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল শুরু করেছে। পরপর ঘটনাগুলো একটি গভীরতর সংকটের ইঙ্গিত দেয়, যা অবিলম্বে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফিরে না আসা পর্যন্ত সমাধান করা যাবে না বলে মনে করেন এই নেতা। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এই মুহূর্তে আমরা কোথায় যাচ্ছি, আগামী দিনে বাংলাদেশ কোথায় যাবে, এই সরকার কত দিন থাকবে, নির্বাচন কবে হবে, নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ কোথায় যাবে- এ বিষয়গুলো সবার মনে কাজ করছে। এখানে আমরা কোনো নিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছি না। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সেই অবস্থা থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে প্রয়োজন হলে তারা রাজপথের আন্দোলনে নামবেন। তবে সেই আন্দোলন যাতে সংঘাতের দিকে না যায় সেদিকের তাদের দৃষ্টি থাকবে। তারা মনে করছেন, আন্দোলনের মাঝে সংঘাত হলে তৃতীয় কোনো পক্ষ এর সুযোগ নিতে পারে। চুপচাপ বসে থাকলে পরিস্থিতি তাদের হাতছাড়াও হয়ে যাবে। আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে গত কয়েকটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন যে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চলবে আগামী দুই মাস আর তার মাধ্যমেই দল আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যে সমাবেশ রয়েছে, সেসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলের তরুণ কর্মীদের মাঠে নামানো হবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ও খুলনায় বিশাল সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথ উদ্যোগে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বগুড়ায় ও ঢাকায়ও সমাবেশ হবে। এ জন্য এখন প্রস্তুতি চলছে। -আমাদের সময়

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com