রাজনীতিবিদেরা পালিয়েছে, আমলারা পূর্ণ শক্তিতে পুনরুজ্জীবিত : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আপলোড সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০৯:২৪:৪২ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০৯:২৪:৪২ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলারা জড়িত ছিলেন। বর্তমানে রাজনীতিবিদেরা নিষ্ক্রিয় বা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন, আর আমলারা পূর্ণ শক্তিতে পুনরুজ্জীবিত হয়েছেন। সোমবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এমন মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয়। প্রবন্ধে দেশের বাজেট ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশের বাজেটে দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্বল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য পূরণ না হওয়া একটি নিয়মিত ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভাগ করার প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি। আলোচনা ছাড়া, পেশাজীবীদের সুযোগ সীমিত করে এবং অংশীজনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এটি করা হয়েছে। এখন এই ভুল সংশোধন করা জরুরি। এনবিআর বিভাজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিদ্ধান্তটি সঠিক হলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ছিল। ড. দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি আমরা পরিসংখ্যান দেখি- তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমেছে, ঋণপ্রবাহ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, এডিআই (বৈদেশিক বিনিয়োগ) কমেছে ও পুঁজিবাজারের সব সূচক নি¤œমুখী। এই অবস্থায় কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? বেকারত্বের হার বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি, অর্থাৎ তাঁদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে। তাহলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে- এটা এখন জোর দিয়ে বলতে পারছি না। জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে আছে। এটা বাড়াতে হবে। আগামী অর্থবছরেও ১০-এর নিচে থাকছে। পরোক্ষ করের বৃদ্ধির হার বেশি। তার মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপরই করের বোঝা বাড়ছে। বাজেটে ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব ব্যয়ের দুটি খাত সবচেয়ে বেশি হচ্ছে- প্রথমটি সুদ ব্যয় আর দ্বিতীয়টি ভর্তুকি। সরকারের অর্থনীতি পরিচালনা কোনো ঘোষিত নীতিমালার আলোকে হচ্ছে না, তা চলছে অ্যাডহক ভিত্তিতে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দুর্বলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মুদ্রানীতি এখনো প্রতিফলিত হয়নি। ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে এলে আমরা একটা সিগন্যাল পাব। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যুব দারিদ্র্য বাড়ছে, এটা বলাবাহুল্য। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। টাস্কফোর্স থেকে বলেছি, দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকার এলেও তারা অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারে নাই। যে ফিসক্যাল পলিসি নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেটাও কিন্তু গত সরকারের। পুরোনো যে কাঠামো রয়েছে, সেটাকেই ধুয়ে-মুছে কাজ করা হচ্ছে, সেটা আমাদের পছন্দ হয়নি। টাস্কফোর্সের যে সুপারিশ ছিল, সেটা ধরে যে গতি আসার কথা ছিল, তা আমরা দেখতে পাইনি। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ-মিয়ানমার দিয়ে জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, একইভাবে বৈষয়িক অর্থনীতির পরিস্থিতিও খুবই জটিল। বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাপনা খুবই সংকটের মধ্যে আছে। এই সংকটের মধ্যেই আগামীর বাজেট করতে যাচ্ছে সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বাজেটের কর জিডিপির লক্ষ্য ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এটা কম। লক্ষ্য বাড়াতে না পারলে অর্জন আরও কম হবে। বিল্ড-এর সিইও ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, দেশে কর্মসংস্থান কমেছে। এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে থাকতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিক, স্টার্টআপদের প্রতি বাড়তি নজর দিতে হবে। তা না হলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com