জগন্নাথপুরের চন্ডিডহর এলাকায় সেতু নির্মাণ

স্বপ্নের সেতু আশ্বাসেই বন্দী

আপলোড সময় : ১৮-০৫-২০২৫ ০৯:০২:৫৩ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৮-০৫-২০২৫ ০৯:২০:৩৪ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি ::
জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা - এই চার উপজেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের ‘চন্ডিডহর’ এলাকা।
এই স্থান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। চন্ডিডহর এলাকায় মহাসিং-ডাউকা-কামারখালি এই তিন নদীর মোহনা অবস্থায়। এই মোহনা পারাপারে আজও একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা। যুগের পর যুগ ধরে কেবল প্রতিশ্রুতি মিলেছে, বাস্তবায়ন হয়নি এই তিন নদীর সংযোগ এলাকায় একটি সেতুর।

এলাকাবাসী জানান, চন্ডিডহর এলাকাটি শুধু চার উপজেলার সংযোগস্থল নয়, এটি অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও সামাজিক উন্নয়নের পথপ্রদর্শকও হতে পারত। বর্ষা মৌসুমে এই স্থান দিয়ে যাতায়াত করে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি যেন অনিবার্য। ওই সময় কয়েক গ্রামের স্কুল ছাত্রছাত্রীদের নৌকাডুবির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকেন অভিভাবকগণ।
এছাড়া দুর্ভোগের শেষ নেই রোগী ও দূরপাল্লার যাত্রীদেরও। সেতু নয়, চলেছে ‘নামকরণ রাজনীতি’ : স্থানীয়রা জানান, বিগত কয়েক বছরে একাধিকবার প্রকৌশলীদের পাঠিয়ে মাটি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চললেও শেষ পর্যন্ত সেতুটি নির্মিত হয়নি।

স্থানীয়দের মতে, আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা- সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং দিরাই-শাল্লা আসনের এমপি জয়া সেনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন প্রকল্পটি থমকে যাওয়ার বড় কারণ। সেতুর নাম ‘মান্নান সেতু’ নাকি ‘সুরঞ্জিত সেতু’ হবে - এই বিতর্কেই বছরের পর বছর গড়িয়েছে। যদিও শেষপর্যন্ত ‘চন্ডিডহর সেতু’ নামেই সম্মত হবার সম্ভাবনা ছিল বলে জানা যায়, কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি নেই।

জনগণের হৃদয়ভাঙা প্রত্যাশা : দিরাই উপজেলার সিকন্দরপুর গ্রামের মুহতামিম হযরত মাওলানা কামরুজ্জামান আক্ষেপের সুরে বলেন- চন্ডিডহর সেতু বিষয়ে প্রথম যিনি কথা বলেছিলেন - তিনি বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাঁর নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লা। তিনিও শুধু বলেই গেলেন, কিন্তু সেতুটি আর হলো না! তারপর আসলেন, দিরাই-শাল্লা থেকে জয়া সেন, শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর আসন থেকে এমএ মান্নান মহোদয়। তাঁরাও একের পর এক আশ্বাস দিয়েছেন- সেতুটি হবে, হবে,হবে বলে।
এনিয়ে এলাকার গণ্যমান্য অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন বটে। কিন্তু তাদের উদ্যোগও এখনও কোনো আলোর মুখ দেখেনি। তার পিছনে কী কারণ ও রহস্য ছিল এলাকার সচেতন মানুষ সেটা বুঝে গেছেন। সবাই শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেলেন কিন্তু লাখো মানুষের কাঙ্খিত সেতুটি বাস্তবায়ন করে গেলেন না।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাইকাপন গ্রামের বাসিন্দা মাসুদুল হাসান দুলন বলেন, প্রস্তাবিত স্থানে সেতু নির্মাণ হলে শান্তিগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা এই তিন উপজেলার মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে আমি মনে করি। যা অত্র এলাকার বাসিন্দাদের জীবনে মান উন্নয়নে ও প্রভূত উন্নতি হবে।

চন্ডিডহর সেতু নিয়ে স্বেচ্ছায় ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার তেলিকোণা গ্রামের বাসিন্দা মাস্টার কুতুব উদ্দিন অন্যতম একজন। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী ক্ষমতায় থাকাকালীন আমরা কয়েকজন মিলে চন্ডিডহর সেতুর জন্য সরাসরি দরখাস্ত দিই। দরখাস্ত পাঠ করে তিনিই আমাদের বলেন- চিন্তা করবেন না! এই সেতুটি করার জন্য আমার প্রাণপণ চেষ্টা থাকবে। কিছুদিন পর ঢাকা থেকে সত্যিই একজন প্রকৌশলী আসলেন কয়েকজন অফিসার সাথে নিয়ে আমাদের চন্ডিপাড়ে। তাঁরা কয়েক জায়গার মাটি পরীক্ষা করলেন। আমি যখন প্রকৌশলীকে জিজ্ঞেস করলাম- স্যার কী অবস্থা! আমাদের চন্ডিডহর সেতুটি কী হবে? তখন প্রকৌশলী বলেছিলেন- আমাদের সাথে পরিকল্পনামন্ত্রী স্যারের কথা হয়েছে। কিছুদিন পর এর ফলাফল আপনারা দেখতে পারবেন। আরেকদিন আমি ব্যক্তিগত কাজে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করি। তখনও চন্ডিডহর সেতু নিয়ে আবারও বলি- মন্ত্রীসাব আপনি ক্ষমতায় থাকতে দয়া করে আমাদের সেতুটি করে দেন। এত বড় রাণীগঞ্জ সেতু যেহেতু করতে পেরেছেন তাহলে সামান্য এই চন্ডিডহর সেতুও আপনার জন্য কিছুই না! আপনার সদিচ্ছা থাকলে চন্ডিডহর সেতুও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবেন। সেখানে শান্তিগঞ্জ, দিরাই ও জগন্নাথপুর এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে মন্ত্রী মহোদয় বলেছিলেন- মাস্টারসাব, চিন্তা নেই! অনেক মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন যখন করতে পেরেছি, আপনাদের সেতুও করে দেবো। কিন্তু আজ মন্ত্রীর কথা, কথাই থেকে গেল! চন্ডিডহর সেতুর বাস্তবায়ন আর হলো না। একটি সেতু, একটি সম্ভাবনার দ্বার : ‘চন্ডিডহর সেতু’ নির্মিত হলে জগন্নাথপুর, শান্তিগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লার মধ্যে সরাসরি ও দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। এই সেতু রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত যাতায়াত সহজ করে তুলবে।

স্থানীয় মাসুদুল হাসান দুলনের ভাষায়, সেতুটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এবং এলাকাবাসীর জীবনমানে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আশা জাগুক বাস্তবতায় : বিগত সময়ের রাজনৈতিক বৈরিতা, উপেক্ষা ও প্রতিশ্রুতির ভাঙা টুকরোর ওপর দাঁড়িয়ে আজও চন্ডিডহর এলাকাবাসী একটি সেতুর জন্য চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে। বর্তমান সরকারের কাছে এটাই চার উপজেলার লাখ লাখ মানুষের একমাত্র দাবি- চন্ডিডহর সেতু নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু হোক।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com