পাগলা-বীরগাঁও সড়ক

বেহাল সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেই দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ

আপলোড সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ১০:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ১০:২০:১৪ পূর্বাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ ::
গেল বছরের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় শান্তিগঞ্জ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ পাগলা-বীরগাঁও সড়ক। হাওরের ঢেউয়ের তান্ডবে সড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকার ব্লক ধসে যায়।
অন্তত ২০টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়ে মূল সড়ক সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
​​​​​​চলতি বর্ষার আগে বেহাল সড়ক মেরামত না করলে হাওরে ঢেউয়ের আঘাতে অবশিষ্ট অংশ বিলীন হওয়ার শঙ্কায় এলাকাবাসী। প্রায় বছর সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বর্ষার আগে জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কার করে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানাযায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজার থেকে পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের খালপাড় সেতু পর্যন্ত সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। খালপাড় থেকে বীরগাঁও বাজারের দূরত্ব আরো আড়াই কিলোমিটার হবে। এ সড়ক দিয়েই ইউনিয়নের মানুষসহ পার্শ্ববর্তী পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের মানুষ পাগলা বাজার হয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। বীরগাঁও থেকে পাগলা বাজারে প্রতিদিন শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকসা যাত্রী আনা-নেওয়া করে থাকে। দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পাগলা-বীরগাঁও সড়কের ব্রাহ্মণগাঁও অংশে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের প্রাক্তন ইউপি সদস্য নূরুল হকের বাড়ির সামনে থেকে ভাঙনের শুরু হয়। ছোট ছোট ভাঙা অংশে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের অংশ শেষ হলেও পূর্ব বীরগাঁওয়ের বড়ভাঙা নামক স্থান থেকে শুরু হয় রাস্তাটির বড় বড় ভাঙা অংশ। বিশেষ করে আমান আলীর বাড়ির সামনের ভাঙা অংশ বেশ বড়। ছোট বড় প্রায় ২০টি ভাঙন আছে এ সড়কে। অন্তত ৮টি স্থানে রয়ে অনেক বড় ভাঙন। কোনো কোনো স্থানে অর্ধেকের বেশি সড়ক ভেঙেছে।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তাটির পূর্ব দিকে রয়েছে পাখিমারা হাওর। বর্ষাকালে পানিতে টইটুম্বুর থাকে হাওর। পাখিমারার বিশাল বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে রাস্তায় বা রাস্তার পাশে। এতেই ভেঙে পড়ে রাস্তা। বিগত বছরের বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কটি। পাখিমারা অংশে গার্ডওয়াল না দিলে সড়কটি স্থায়ীভাবে রক্ষা করা যাবে না। তাছাড়া বর্ষায় সাময়িকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল। সড়ক সংস্কারের বিষয়ে তৎপর পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ। যে হারে রাস্তাটি ভাঙতে শুরু করেছে তাতে বীরগাঁওয়ের সাথে পাগলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে একটি আবেদনও করেছেন পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নবাসী।

বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বাবরুল নাহিদ বলেন, আমাদের এলাকার অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। আমাদের কোনো বিকল্প সড়ক পথ নেই। সড়কের অবস্থা নাজুক। সড়কের অনেক স্থান ক্ষতিগ্রস্ত। যদি বর্ষার আগে সড়কটি মেরামত না করা হয় তাহলে সড়কটি বিলীন হয়ে যাবে। তখন এলাকাবাসী মহাদুর্ভোগে পড়বেন।
পরিবহন শ্রমিক নেতা ছৈয়দুর রহমান বলেন, আমরা এ সড়কে নিয়মিত গাড়ি চালাই। প্রতিদিন অন্তত দেড়শ’ সিএনজি এই সড়কে চলে। অসংখ্য যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। রাস্তাটির ভাঙা অংশে গেলে ভয় করে। একটি সিএনজি দাঁড়িয়ে থেকে আরেকটি সিএনটিকে পাস দিতে হয়। ভাঙতে ভাঙতে রাস্তার মাঝখান অতিক্রম করেছে। নিয়মিত বৃষ্টি পড়ার আগে রাস্তাটি সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
পূর্ব বীরগাঁও ইউপি সদস্য আব্দুল বাছিত বলেন, রাস্তাটি দু’এক বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। পাখিমারা হাওরের ঢেউয়ে গত বছর এমন ভাঙা ভেঙেছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি, রাস্তাটি যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়। রাস্তার সংস্কার কাজ টিকিয়ে রাখতে হলে পাখিমারা অংশে গার্ডওয়াল দেওয়ার দাবি করছি। না হলে কোনোভাবেই রাস্তা টিকানো যাবে না। সড়কটি সংস্কারের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি।
এদিকে, রাস্তা সংস্কারের বরাদ্দ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে জেলার সব উপজেলায় চাহিদা মতো কাজ করতে পারছেন না বলে আক্ষেপ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা চাই চার পাঁচশো কোটি টাকা বরাদ্দ হোক। যদি এমন পেতাম তাহলে প্রতিটি উপজেলার সড়কগুলো চকচক করতো। সব উপজেলায় গত বাজেটে মাত্র ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। একেকটি উপজেলায় ৩/৪ কিলোমিটার সড়কপথও এ বাজেটে করাতে কষ্ট হবে। তবু আমরা অনেক সড়কের সংস্কারের জন্য আবেদন পাঠিয়েছি। তবে পাগলা-বীরগাঁও সড়কটি সে তালিকায় আপাতত নেই। আগামী বর্ষার আগে বরাদ্দ পাবো কি-না তা নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছি।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com