পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উস্কে দিয়ে ভিডিও ধারণ করে বৃদ্ধের মানহানি

আপলোড সময় : ১৬-০৫-২০২৫ ১১:৪৫:২৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-০৫-২০২৫ ১১:৪৫:২৬ অপরাহ্ন
হোসাইন আহমদ :: নব্বই ঊর্ধ্ব প্রবীণ হাজী মোহাম্মদ আজহার আলী। শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আকিকুর রহমান ও শিমুলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুর রহমান শাহীনের বাবা তিনি। বার্ধক্য জনিত কারণে প্রায়ই মেজাজ হারান বৃদ্ধ আজহার আলী। নিয়মিত রাগ করেন ছেলেদের উপরও। তাঁর এই বার্ধক্যজনিত সমস্যার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে মানহানির অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী ডিভিশনে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল, শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলামের পুত্র জোনায়েদ আহমদ আল আমীনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন হাজী মোহাম্মদ আজহার আলীর ছেলেরা। একই সাথে ধান লুটপাটের অভিযোগ এনে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে মানহানি করারও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। তাদের এমন অভিযোগের সাথে সংহতি জানান আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসী। শুক্রবার (১৬ মে) বিকালে শিমুলবাক গ্রামে লোকজন জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের সামনে এই অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় হাজী মোহাম্মদ আজহার আলীর অন্যান্য ছেলেরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সাথে অসত্য অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদও জানিয়েছেন তারা। অভিযোগ ও প্রতিবাদে তারা বলেন, হাজী মোহাম্মদ আজহার আলী একজন নব্বই ঊর্ধ্ব প্রবীণ ব্যক্তি। হাতে লাঠি নিয়ে নিয়মিত চলাফেরা করতে হয় তাঁকে। পারিবারিক বিরোধের জেরে গত বুধবার (১৪ মে) বিকালে গণিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী ডিভিশনে কর্মরত কনস্টেবল জোনায়েদ আহমদ আল আমীন ছুটিতে নানার বাড়ি বেড়াতে এসে নিজ মামা যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষ নিয়ে হাজী মোহাম্মদ আজহার আলীর সাথে বাদানুবাদ করেন। বাদানুবাদের এক পর্যায়ে গালমন্দ করে কৌশলে হাজি মোহাম্মদ আজহার আলীকে উস্কে দেন। এসময় বার্ধক্যজনিত কারণে মেজাজ হারান হাজী মোহাম্মদ আজহার আলী। মেজাজ হারিয়ে তিনি যখন গালাগালি শুরু করেন তখন ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া দেন পুলিশ কনস্টেবল জোনায়েদ আহমদ আল আমীন এবং ধান লুটপাটের কথা বলে সংবাদ প্রচার করান। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর। হাজী মোহাম্মদ আজহার আলী স¤পর্কে জোনায়েদ আহমদ আল আমীন নানা হন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করেছেন জোনায়েদ আহমদ আল আমীন। শিমুলবাক গ্রামের বাসিন্দা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আকবর আলী বলেন, লুটপাটের কথা বলে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তা ঠিক নয়। ছালিম উদ্দিনের খলা থেকে ধান শুকিয়ে ট্রলি দিয়ে বাড়িতে নিচ্ছিল যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাহাঙ্গীরের বড় বোন হেনা বেগম ও তার লোকজন। কিছু ধান খলায় থাকাবস্থায় হাজী মোহাম্মদ আজহার আলী চাচার সাথে ঝগড়া হয় পুলিশ কনস্টেবল জোনায়েদ আহমদ আল আমিনের। পরে খলায় থাকা বাকি ধান সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্য মিলে ট্রলিতে করে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে পৌঁছে দেন। এখানে লুটপাটের কোনো ঘটনা ঘটতে দেখিনি। খলার মালিক ছালিম উদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীরের ধান জাহাঙ্গীরের লোকজনই নিয়েছে। ধান নেওয়ার সময় জাহাঙ্গীরের বোন হেনা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তার ভাগ্না আল আমীন হাজি সাহেবের সাথে খুবই অন্যায় আচরণ করেছে। প্রাক্তন ইউপি সদস্য আবদুল তালিব বলেন, লুটপাটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঝামেলার পরে যে ধান খলায় ছিল তা আমি ও বর্তমান মেম্বার তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। মুরব্বি মানুষকে জোনায়েদ আহমদ আল আমীন যেভাবে অপমান অপদস্ত করেছে তা একদমই ঠিক হয়নি। ট্রলি চালক শায়েখ মিয়া ও কামরান হোসেন বলেন, মেম্বার সাহেব আমাদের বলেছেন আমরা ধান জাহাঙ্গীর ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। তার বোন ধান রিসিভ করেছেন। সালিশ ব্যক্তি জসিম উদ্দিন ও পাশের গ্রাম রঘুনাথপুরের বাসিন্দা মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, হাজি মোহাম্মদ আজহার আলী একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও সহজ সরল প্রকৃতির লোক। তাকে উস্কে দিয়ে গালাগালির ভিডিও রেকর্ড করে ফেসবুকে দেওয়ায় এলাকার মান ক্ষুণœ হয়েছে। ধান লুটপাট হয়েছে বলে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি তা স¤পূর্ণ মিথ্যা। আরেক গ্রাম থেকে এসে জোনায়েদ আহমদ আল আমীন যে কাজটি করেছে তাতে আমাদের গ্রামের বা এলাকার মান-সম্মান ক্ষুণœ হয়েছে। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। হাজি আজহার আলীর ছেলে ও বিএনপি নেতা সৈয়দ আকিকুর রহমান, মাসুদ আহমদসহ অন্যান্য ছেলেরা বলেন, আমার বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন বিরানব্বই বছর বয়সী বৃদ্ধ লোককে আগে গালাগালি করে উস্কে দিয়েছিল জুনেদ আহমদ আল আল আমীন। বয়সের কারণে সহজেই মেজাজ হারান তিনি। বাবা বাবার অংশের গালাগালি ভিডিও রেকর্ড করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে সে। এরপর সংবাদ প্রচারও করিয়েছে। সংবাদে অনেক মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। বলা হয়েছে, ধান নাকি লুটপাট করেছেন আমাদের বাবা ও লোকজন। মূলত আমরা চার ভাইয়ের কেউই বাড়িতে থাকি না। গ্রামের সবাই সাক্ষী এখানে কোনো লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। বরং পুলিশে চাকরি করার কারণে আল আমীন আমার বাবাকে অনেক হুমকি ধামকি দিয়েছে। রিমান্ডে তুলে মারধর করার হুমকিও দিয়েছে সে। অন্য জেলায় চাকরি করা একজন কনস্টেবল কি বাড়িতে ছুটিতে এসে এমন আচরণ করতে পারে? এতে কী স্বনামধন্য পুলিশ বাহিনীর সম্মান ক্ষুণœ হচ্ছে না? যদি একজন কনস্টেবল এমন আচরণ করতে না পারেন তাহলে আমরা বাবার মান ক্ষুণœ করায় ও মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করায় পুলিশ আল আমীনের শাস্তি চাই। অভিযোগের বিষয়ে জোনায়েদ আহমদ আল আমীন বলেন, আমার উপরে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা স¤পূর্ণ মিথ্যা। ছুটিতে মামার বাড়ি বেড়াতে গেলে দূর থেকে দেখতে পাই আমার খালামনিকে হাজী মোহাম্মদ আজহার আলী মারতে আসছেন। এসময় আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে আটকিয়েছি। এলাকার অনেক মানুষ থাকা স্বত্বেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। এসময় আমি এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করি। তবে ফেসবুকে আমি কোনো ভিডিও আপলোড করিনি। আপনার ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে কিভাবে গেলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুধু আমার মামা জাহাঙ্গীর আলমের কাছে এই ভিডিও পাঠিয়েছিলাম। কে বা কারা তা ফেসবুকে ছড়িয়েছে সে স¤পর্কে আমি অবগত নই। শিমুলবাক গ্রামের বাসিন্দা মৃত মজর আলীর ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমার বাড়িতে পুরুষ মানুষ কেউ নাই। সেই সুযোগে চেয়ারম্যান শাহিন মিয়া ও তার ভাই সহ তাদের আত্মীয় স্বজন আমার ধান লুটপাট করেছে। তিনি বলেন, ঘটনার সময় বিদ্যুৎ ছিল না। তাই আমার বাসার সিসি টিভিতে রেকর্ড হয়নি। আরেক প্রশ্নে বলেন, গ্রামের কেউ আমার পক্ষে নাই। সবাই চেয়ারম্যানের পক্ষের লোক, এ জন্য সবাই এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন।

সম্পাদকীয় :

  • সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো. জিয়াউল হক
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : বিজন সেন রায়
  • বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মোক্তারপাড়া রোড, সুনামগঞ্জ-৩০০০।

অফিস :

  • ই-মেইল : [email protected]
  • ওয়েবসাইট : www.sunamkantha.com