
স্টাফ রিপোর্টার ::
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের প্রিয় ভাগ্নে বাউল সাধক শাহ আবদুল তোয়াহেদ গুরুতর অসুস্থ। গত ৫ মে তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছেনা এই নিভৃতচারী হতদরিদ্র বাউলের। বর্তমানে তিনি ওসমানী হাসপাতালের ৭ম তলায় মেডিসিন (পুরুষ) বিভাগের ৩৭ নং ওয়ার্ডে বারান্দায় চিকিৎসাধীন আছেন। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বাউলের অনুরাগী ও স্বজনরা জানান, স্বশিক্ষিত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম তার এই ভাগ্নের মধ্যে প্রখর মেধা-সাধনার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করে তাকে তৎকালীন সময়ে সিলেট শহরে এনে পড়ালেখা করান। বাউল মামার আর্থিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি স্নাতক পাশ করেন। মামাকেই মুরশিদ জ্ঞানে ভজন করেন। এরপর থেকেই বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম প্রিয় ভাগ্নেকে সাথে সাথে রাখতেন। শাহ আবদুল করিমের প্রতিবাদী, নির্লোভ আদর্শের উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি বাউল সমাজে সমাদৃত। সকল লোভ ও লালসার ঊর্ধ্বে ওঠে নীরবে বাউল সাধনা করছেন এই অকৃতদার বাউল শাহ আবদুল তোয়াহেদ।
বাউল অনুরাগীরা আরো জানান, শাহ আবদুল করিমের ভাটির চিঠি গীতিগ্রন্থের পা-ুলিপিকার ছিলেন শাহ আবদুল তোয়াহেদ। পরবর্তীতে এটি গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই পান্ডুলিপিটি নিজ হাতে লিখে প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন শাহ আবদুল তোয়াহেদ। দীর্ঘদিন তিনি মামার সান্নিধ্যে থেকে এবং উচ্চশিক্ষা লাভের কারণে বাউলগান ও লোকগান নিয়ে ব্যাপক পড়ালেখা করেন। এ কারণে তার গানে বিশেষ গভীরতা প্রকাশ পেয়েছে। প্রায় সাত শতাধিক গান রচনা করেছেন তিনি। দুইশ গানের একটি গ্রন্থ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তার রচিত বিভিন্ন গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছেন।
উজানধল গ্রামে বাউল শাহ আবদুল করিমের পৈতৃক ভিটাতেই বসবাস করেন শাহ আবদুল তোয়াহেদ। তারও শিষ্য ও ভক্ত রয়েছে। তিনি নীরবে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাউল সাধনায় রত আছেন। বাউল ভক্তরা জানান, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ শাহ আবদুল তোয়াহেদ। তিনি ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতাসহ বিভিন্ন রেগে ভোগছেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা নিতে পারছেন না এই বাউল। ফলে দিনদিন আরো অসুস্থতা বাড়ছে। গত ৫ মে ব্রেইন স্ট্রোক করে এখন ওসমানীতে ভর্তি আছেন।
তার ভাতিজা নূর বলেন, বাউল শাহ আবদুল তোয়াহেদ ব্রেইন স্ট্রোক করার পর ওসমানীতে নিয়ে এসেছি। আমরা বারান্দায় চিকিৎসাধীন আছি তিনদিন ধরে। চাচার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু অর্থাভাবে আমরা সাধারণ চিকিৎসাও করাতে পারছিনা।
ওসমানী হাসপাতালের মেডিসিন পুরুষ ওয়ার্ডের ইনচার্জ ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, বাউল সাধক শাহ আবদুল তোয়াহেদের চিকিৎসা চলছে। আমরা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।