
‘দুই উপদেষ্টার এপিএসের দুর্নীতির কথা শুনলে হাসিনাও বিস্মিত হবেন : রিজভী’ উদ্ধৃতিচিহ্নাবদ্ধ বাক্যটি একটি সংবাদপ্রতিবেদেনের শিরোনাম। প্রতিবেদনের ভেতরে আর কী কী আছে পাঠ করার কোনও দরকার নেই। কারণ সেগুলো পুঁজিবাদী সমাজসাংস্থিতিক পরিসরে সম্পদ চুরি, লুটপাট কিংবা আত্মসাতের বিভিন্ন প্রকার-প্রকরণের বিবরণ ভিন্ন অন্য কীছু হবার কথা নয়। সেটা বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির ভেতরে একটি পচেগলে যাওয়া দুর্গন্ধময়তার পরিসরে মাছির মতো ভনভন করে ঘুরে বেড়ানো বয়ান। ‘দুই উপদেষ্টার এপিএসের দুর্নীতির কথা শুনলে হাসিনা বিস্মিত হবেন’ বলে মনে হয় না। কারণ ভারতে চলে যাওয়ার আগে তিনি নিজেইে বলেছেন, তার বাড়ির কর্মচারি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে হেলিকাপ্টারে ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাপনা প্রভুভক্ত কুকুরের মতো কেবল লেজ নাড়িয়েই তৃপ্তি লাভ করেছে এবং প্রকারান্তরে প্রমাণ করেছে, রাজনীতি অর্থনীতির ঘনীভূত রূপ। চুরি, ডাকাতি, লুটপাটের অর্থনীতির ভেতরে
রাজনীতিটা তাই হেনতেন প্রকারণে হয়ে উঠে পুরোপুরি আত্মসাৎনির্ভর, অর্থাৎ সম্পদ চুরি ও পাচার করার করার রাজনীতি। রাজনীতির এই পরিপ্রেক্ষিতে উপেদেষ্টা, উপদেষ্টার এপিএস, কিংবা তার পিয়ন-- সে তিনি যেই হান না কেন-- কেউই সর্বাস্তৃত আত্মসাতের প্রলয়ঙ্করী প্রভাব থেকে রেহাই পেতে পারেন না। বরং ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’ প্রবাদটি প্রতিপন্ন করতে পারঙ্গমতা প্রদর্শনে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। অন্তত মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের আর্থরাজনীতিক বিকাশ তার মূর্তিমান দৃষ্টান্ত। অনেকেই এমন আছেন যারা এমন সব কা-কারখানা দেখে কখনওই অবাক হন না বরং নীরব থাকেন। কারণ তাঁরা মনে করেন, এই দেশে একটি কাঠামোগত সহিংসতার রাজনীতিক প্রকরণকে প্রতিষ্ঠিত করে রাখা হয়েছে, সহজে তার বিরোধিতা করা যায় না এবং ক্ষেত্রবিশেষে এবংবিধ বিষয়ে সরবতা স্ববিপদ আমন্ত্রণে সহায়ক হয়ে উঠে। তাই মনে হয়, রিজভী বা ফরহাদ মযহার অথবা অন্য কেউ কেউ এসব আত্মসাৎ সংক্রান্ত রাজনীতি বিষয়ে উচ্চবাচ্য করবেন এবং সেটা চলতেই থাকবে যতোদিন না সম্পদ আত্মসাতের অর্থনীতির পরিসরে গড়ে উঠা চুরি করার রাজনীতি বন্ধ না হবে। এই চুরি করার রাজনীতি বন্ধ করতে হলে, অর্থনীতির আমূল সংস্কার চাই, যে সংস্কারটা হবে অর্থনীতির ভেতরে মানুষ কর্তৃক মানুষ শোষণের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রত্যয়ে দ-য়মান হওয়া। তা হলেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাত অথবা সংবিধান, দুর্নীতি দমন কমিশন ইত্যাদি সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে বৈষম্য টিকিয়ে রাখার রাজনীতির ভেতরে নাক ডুবিয়ে রেখে-- উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রী কিংবা তাদের এপিএস কিংবা পিয়ন যাই বলুন-- কাউকেই দুর্নীতি থেকে বিরত রাখ যাবে না।
অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রয়োগের মধ্য দিয়ে দুর্নীতিকে মানুষের একমাত্র বাঁচার অবলম্বন করে তোলে দুর্নীতি নির্মূলের প্রহসন করা যায় বটে, কিন্তু দমন করা যায় না। একেই বলে সর্ষের ভেতরে ভূত। তাই বলি, আগে এই সর্ষের ভেতরের ভূতকে তাড়াতে হবে।