
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এই সমস্যাটি কেবল দোয়ারাবাজারে নয়, দেশের সর্বত্র, সকল সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান আছে বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেন, কোনও পরিসংখ্যানের তোয়াক্কা না করেই। আসলে সেটার দরকারও পড়ে না। এমনিতেই বোঝা যায় যে, দেশে কার্যক্ষম মানুষের বেকারত্ব কম নয় বরং বেশিই, যে কারণে কাজ না পেয়ে লোকেরা উপার্জনের জন্যে বৈধ-অবৈধ উপায়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে হিতে বিপরীতও হয়েছে। বাইরে গিয়ে কেউ কেউ নিজের জীবনকে বিপন্ন করছে ও ক্ষেত্রবিশেষে লাশ হয়ে ফিরছে।
সম্প্রতি রাশিয়া গিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে চাকরি করে লাশ হয়ে ফিরেছে গণমাধ্যমান্তরে এমন মর্মন্তুদ সংবাদ পাওয়া গেছে। অথচ এই দেশ সতেরো কোটিরও অধিক জনসংখ্যার দেশ, এখানে তরুণ বয়সের মানুষেরও অভাব নেই। এদেশে শস্তায় মানুষের শ্রম শোষণ করার অর্থনীতি গড়ে তোলতে গিয়ে দেশে কারিগরি জ্ঞানবঞ্চিত শিক্ষিত মানুষ তৈরি করা হয়েছে এবং বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থাননের পরিসরকে সংকুচিত করে বেকারত্বের হারকে ক্রমাগত বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। জনবল সংকট নিরসনের জন্যে অর্থাৎ বেশি করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্যে টাকার সংস্থান না হলেও বিদেশে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে টাকার সংস্থানের কোনও ঘাটতি পড়ে না। পরিতাপের বিষয়, দেশের অর্থনীতিটাকে এমন করেই গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে তাই দুর্নীতির রমরমা অবস্থা বিরাজ করে সব সময়ই। অর্থাৎ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পর্যবসিত করে আমলাতান্ত্রিক মুৎসুদ্দি পুঁজির বহর বাড়ানোকে প্রাধান্য দিয়ে দুর্নীতিতে বিশ^সেরার অভিধা পেতে এই দেশ কার্পণ্য করে নি, যদিও কার্পণ্য করেছে দেশের কর্মক্ষম মানুষকে দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি করে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলতে, উৎপাদনে দক্ষ কলকারখানা গড়ে তোলতে। যথার্থ অর্থে এই ব্যর্থতা দেশের নয়, অর্থাৎ দেশের বেসরকারি মানুষের নয়। যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে এই দেশটাকে পরিচালনা করেন, ব্যর্থতা আসলে তাঁদের। রাজনীতির লক্ষ্য বেসরকারি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত না হলে উন্নয়নের নামে দেশের মানুষের ভোগান্তি কেবল বাড়েই, নিপীড়নের শেষ হয় না। কেউ কেউ বলেন, কোনও দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকটের অর্থ হলো, দেশটিতে উন্নয়নের নামে প্রতারণা করে প্রকারান্তরে অনুন্নয়নকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, অধিপতি শ্রেণির স্বার্থ ও আধিপত্য বিস্তারের অভিপ্রায়ে। সাধারণ বেসরকারি মানুষের নি¤œমানের জীবন নিশ্চিত করার বিনিময়ে অধিপতি শ্রেণির উচ্চমানের বিলাসবহুল জীবন নিশ্চিত করাই এবংবিধ রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য। এই রাজনীতি পরিহার করতে হবে। তবেই কোনও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান- তা শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিংবা অন্য যে কোনও সংস্থানই হোক-- জনবল সংকটের সমস্যায় ভোগবে না। ভুলে গেলে চলবে না, বেকারত্ব জিইয়ে রেখে, দেশের ভেতরে লুটেরা শ্রেণির সৃষ্টি করা সম্ভব, বেকারত্ব দূর করে দেশোন্নয়ন সম্ভব নয়। সুতরাং জনবল বাড়াতেই হবে। জনবল বাড়াতে না পারলে স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়নও পিছিয়ে থাকবে।