
‘বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের গামাইড়তলা গ্রামে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে প্রতিবন্ধী পরিবারের বসতবাড়ি ও মসজিদ মার্কেটের জায়গা জবর দখলের প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় অভিযুক্ত সুরুজ্জামান ফকিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে গামাইড়তলা রতনের ঘাট পয়েন্টে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।’ এই উদ্ধৃতিটি ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক সুনামকণ্ঠে ছাপা হওয়া সংবাদপ্রতিবেদন শুরুর অংশবিশেষ।
এতে একটি অবিসংবাদিত সত্যবার্তা প্রকাশিত ও প্রতিপন্ন হয়েছে। অর্থাৎ এই দেশে ও রাষ্ট্র পরিসরের প্রতি ইঞ্চিতে এবংবিধ দখলচ্যুতির ঘটনা ঘটেই চলেছে প্রতিনিয়ত। রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা সংস্কৃতির এ হেন কোনও ক্ষেত্রপরিসর নেই যেখানে এমন দখলচ্যুতির ঘটনা ঘটছে না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে বারোয়ারি টয়লেটের কর্তৃত্ব দখল পর্যন্ত সবখানে এই দখল-বেদখলের পাঁঁয়তারা চলছে এবং বোধকরি চলতেই থাকবে। সমুদ্র, নদী, পাহাড়, মাঠ, চর, বিল, জমি, বাড়ি, হাসপাতাল, মন্দির, মসজিদ, মহাল, বাজার, প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, আন্তর্জাল ইত্যাদি ইত্যাদি - এমন কি মানুষের মগজ পর্যন্ত - সবকীছুই ক্রমাগত দখলচ্যুতির শিকারে পর্যবসিত হচ্ছে।
ফিলিস্তিন কিংবা ইউক্রেন ইত্যাদি রাষ্ট্র বা দেশও তার থেকে রেহাই পায় নি এবং বোধ করি পাবেও না। সেখানে সশস্ত্র যুদ্ধ চলছে। সবখানেই সা¤্রাজ্যবাদীসুলভ আধিপত্য বিরাজ করছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে এই সমগ্র জগৎমগজ আধিপত্যের রাজত্বের অধীন। এই রাজত্বের পরিসরেই একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কিংবা এই দেশের একটি উপজেলা হিসেবে বিশ্বম্ভরপুরের অবস্থান। সেখানে একজন প্রতিবন্ধী বা ধর্মস্থানের দখল একজন প্রভাবশালী আধিপত্যবাদী দখল করে নিয়ে নিতেই পারেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনি সশস্ত্র যুদ্ধ করছেন না, বরং আইনের ফাঁক ব্যবহার করে দালিলিক জালিয়াতির মাধ্যমে যুদ্ধ করে চলেছেন। এই যুদ্ধপরিসর তাঁর জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছে আমাদের দেশের প্রচলিত আইন।
এবংবিধ জালিয়াতির যুদ্ধ পরিচালনা এখানে স্বাভাবিক এ জন্য যে, এ দেশে এখনও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ঔপনিবেশিক পর্যায়ে রেখে দেওয়া হয়েছে, যে প্রশাসন মূলত আধিপত্যবাদিতা বিস্তারের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে আইনি পদ্ধতিকে অনুসরণ করেই। একদা যেমন লর্ড ক্লাইভ কর্তৃক বাংলা দখল হয়ে গিয়েছিল তেমনি দখলচ্যুতির ঘটনা ঘটেই চলেছে সব ক্ষেত্রে, সেটা ভৌত বিষয় থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক বিষয় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে সর্বশেষ মানুষের মগজকেও দখল করে চলেছে।
বিশেষ করে জমির ক্ষেত্রে জমির মালিকানা বিষয়ক আইন সংস্কার না করে সেটাকে এখনও ঔপনিবেশিক আমলের দখলচ্যুতির সহায়ক বিধি-ব্যবস্থা হিসেবেই রেখে দেওয়া হয়েছে এবং প্রকারন্তরে কোনও প্রতিবন্ধীর বসতবাড়ি কিংবা মসজিদের মালিকনার জমি দখল করে নিলে প্রশাসনের তা চোখে পড়ে না, সাধারণ মানুষ কর্তৃক তার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে প্রশাসনকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়, প্রতিকার চাইতে হয়।
অভিজ্ঞমহলের প্রশ্ন, এবংবিধ ঘটনা সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে কিন্তু প্রশাসনের চোখে পড়ে না কেন? অথচ এইসব আধিপত্য বা দখলচ্যুতি বা অন্যায় দখল-বেদখলের প্রতিকার করার জন্যেই তো প্রশাসনের সৃষ্টি। সমাজের প্রতিটি সাধারণ সদস্য প্রশাসনের কাছে এই অন্যায় দখলবাজির প্রতিকার দাবি করছেন, অচিরেই, যেনো প্রতিবন্ধী পরিবার তার বসতবাড়ি ফিরে পান।