
শামস শামীম::
হাওরের সবুজ ধান পেকে এখন সোনারবরণ হলুদ রূপ নিয়েছে। হাওর-ভাটির কৃষকের চোখে এই ধান ‘কাইঞ্চা সোনা’ বা কাঁচা সোনা।
হাওরের প্রায় ১০ লাখ কৃষকের কেবল চোখই নয়, দেহ-মন নিয়ে সবাই এখন হাওরের ফসল গোলায় তোলার উৎসবে মেতেছেন। গ্রীষ্মের তীব্র গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার কৃষকের অবয়ব এখন দেখতে পা-ুরপ্রায়। সকাল সন্ধ্যা হাওরে-কান্দায়-খলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী পুরুষ শিশু কিশোর বৃদ্ধ সবাই।
বাম্পার ফলনে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ধানকাটা শ্রমিকরাও ন্যায্য ‘হিস্যা’ (ধান কাটার মূল্য) পেয়ে খুশি। হাওর ঘুরে সবার রোদপোড়া অবয়বে তৃপ্তির হাসি লক্ষ করা গেছে।
সরেজমিন সুনামগঞ্জের দেখার হাওর ও জামালগঞ্জের পাগনার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, অনুকূল আবহাওয়ায় যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্রমিকরাও ধান কাটছেন। কৃষক পরিবারের নারীরা ধান শুকানো, বস্তাজাত করা, চিটা ছাড়ানো ও গবাদিপশুর জন্য খর সংগ্রহের কাজ করছেন। খলাঘর ও খলার সামনে অবস্থানরত নারীরা তাদের কিশোরী-তরুণী কন্যাসহ শিশুদেরও নিয়ে এসেছেন। তারাও ফসল তোলার উৎসবে পারিবারিক সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে।
এই চিত্র এখন প্রতিটি হাওরেরই। তবে সরকারি ভর্তুকিতে হার্ভেস্টর যন্ত্র নিয়ে খুশি নন কৃষক ও হার্ভেস্টর মালিকরা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মওসুমে হাওরে বিআর ২৮, ২৯, ৮৮, ৮১, ৮৯, ৯২, সিনজেনটা, হীরা-১,২, সুরভি, এসএলএইটএইচ, ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ হয়েছে। দেশি প্রজাতির গচি, টেপি, বোরোও চাষ হয়েছে কিছু জমিতে। বন্যা ও খরা মোকাবেলা করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন দেশিধান চৈত্রের শেষ দিকে কেটে গোলায় তোলেছেন কৃষক।
কৃষকরা জানান, হাইব্রীড ধান কেয়ার (প্রতি ৩০ শতাংশ) ২৫-৩০ মণ, উফশী ১৬-২০ মণ এবং দেশি ধান ৬-৮ মন হয়েছে। কেয়ার প্রতি সর্বমোট খরচ হয়েছে ৫-৭ হাজার টাকা। ধান চাষ থেকে গোলায় তোলা পর্যন্ত এই ব্যয় হয় বলে জানান কৃষকরা। কৃষি বিভাগের মতে, চলতি বছর জেলায় ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ থেকে উৎপাদন হবে ৯ লক্ষ ২১ হাজার ৪১৩ মে. টন চাল। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। চাষকৃত বোরো ধানের মধ্যে হাওরে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৬৮ হেক্টর এবং নন হাওরের ৫৮ হাজার ২৪২ হেক্টর জমি চাষ হয়েছে।
এবার হাইব্রীড ৬৫ হাজার ২০০ হেক্টর, উফসী ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ২১০ হেক্টর, স্থানীয় মাত্র ১ হাজার হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ ধান বিআর ২৮ ও ২৯ ধান চাষ থেকে কৃষকরা সরে আসছেন। তবে দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও ধানের প্রতি বিশেষ টানের কারণে এখনো অনেক কৃষক মায়া ছাড়তে পারছেন না এই দুই প্রজাতির ধানের। কৃষি বিভাগের পরামর্শ উপেক্ষা করে বিআর ২৮ ও ২৯ আবাদ করছেন।
যারা কৃষি বিভাগের কথায় উফশী ও হাইব্রীড চাষ করছেন তারাও এই ধান নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। ফলন ভালো হলেও হাইব্রীড ধান ঝলক রাজ ও উফশী ৮৮, ৯২ সহ কয়েকটি প্রজাতির পাকা ধানের ঝরে পড়ার হার বেশি। এতে ফলনে প্রভাব পড়ছে বলে জানান কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ধান রোপণের পর যে জমি পানি পায়নি তাদের ধানেরই এই সমস্যা হয়েছে। এখন বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের মওসুম। তাই কৃষি বিভাগ দ্রুত ধান কাটার নির্দেশনা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে প্রায় সাতশটি কাম্বাইন হার্ভেস্টর হাওরে ধান কাটছে। বাইরের জেলা থেকে এসেছে আরো ২৩৬টি। আরো ১৭০টি রিপার যন্ত্র রয়েছে ধান কাটার জন্য। এছাড়াও ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭০ শ্রমিক, বাইরের জেলা থেকে আগত ২৪ হাজার ২৩০ জন এবং বালু মহালের আরো প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক হাওরে এসে ধান কাটার কাজ করছেন। একটি কম্বাইন হার্ভেস্টর মেশিনে দৈনিক ৩০ বিঘা ও একটি রিপান মেশিনে প্রতিদিন ৫ বিঘা জমির ধান কাটতে পারে। এছাড়াও ১ জন শ্রমিক গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ধান কাটতে পারেন। তবে ভর্তুতির কম্বাইন হার্ভেস্টর নিয়ে ক্ষোভ ও প্রশ্ন আছে কৃষকদের। সরকারি ৭০ ভর্তুকির এই যন্ত্র নির্দিষ্ট কম্পানি নিম্মমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে সেট করে দেওয়ার পাশাপাশি ওয়ারেন্টি সময়েও কৃষকদের সেবা দেয়না বলে জানা গেছে।
দেখার হাওরের হিয়ালমারা অংশের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, আমি ৫ কেয়ার জমিতে বোরো চাষ করছিলাম। ৩ কেয়ার কাটি লিছি। ভালো ফলন অইছে। ইবার বছর ভালা। অন্যবার ডোবরার পাইন্যেও আমরা আওর নেয়গি। ইবারের ফসিল আনাম রইছে। একই হাওরের মধপুর গ্রামের কৃষক আলাই মিয়া বলেন, আউরো ১৬ কিয়ার জমিন রইছলাম। ১২ কিয়ার কাটি লিছি। আর চাইর কেয়ার রইছে। ভালা ফসিল অইছে। ভালা লাভবান অইছি। ইলা বৈশাখি পরতি বছর অইলে আমরা ভালা থাকতাম ও দেশরেও ভালা রাখতাম। এই হাওরের গয়াছড়া গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, সরকারি মেশিন গভির জমিনো লামেনা। যারা মেশিন আনছে তারা টেকা বেশি নেয়। মেশিনও নষ্ট অইযায়। আমি লাউড়েরগড় তনি ধান কাউট্যা আনাইছি। ৮ হিস্যায় তারারে খেত দিছি। ধানের সাত ভাগ আমি ও এক ভাগ তারা নিবো। তারারে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কইরা দিছি। যাওয়ার সময় ট্রাক ভইরা ধানও বাড়িত পৌছাইয়া দিমু। তারপরও বইচ্ছর ভালা অওয়ায় ইবার লাভবান অইতাম পারমু। তাহিরপুরের লাউড়েরগড় গ্রামের বালু শ্রমিক আলমগীর মিয়া যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর ও কয়লা আহরণ করেন। তিনি ১৯ জন শ্রমিক নিয়ে দেখার হাওরে ধান কাটতে এসেছেন। আলমগীর বলেন, ১৫-২০ দিন কাটলে ৬ মাস খাইতাম পারমু। ধান বালা অইছে। মাজনও (কৃষক) খুশি. আমরাও খুশি ইবার। দিন মাদানও বালা। ইলা থাকলে এক সপ্তায় গিরস্তের ধান কাটা শেষ করিলিমু। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা আজাদ বলেন, বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। দ্রুত ধান কাটাও হচ্ছে। যন্ত্র ও শ্রমিক পর্যাপ্ত আছে। মওসুমও ভালো। তাই কৃষকরা স্বস্তিতে ধান কাটছেন। এই মাসের মধ্যেই হাওরের বোরো ধান কাটা শেষ হবে। তিনি বলেন, ধান ভালো হয়েছে। তবে যেসব কৃষক জানিয়েছেন উফশী ও হাইব্রীড ক্ষেতে ঝরে যায় তা কারো কারো ক্ষেত্রে সঠিক। কারণ যাদের ক্ষেত পানি পায়নি তাদের ক্ষেতের এই সমস্যা। গত শনিবার পর্যন্ত হাওরে ৬০ হাজার ৩৭১ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। যা আবাদের প্রায় ২৭ ভাগ। এখন প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ হাজার হেক্টর ধান কাটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হাওরের সবুজ ধান পেকে এখন সোনারবরণ হলুদ রূপ নিয়েছে। হাওর-ভাটির কৃষকের চোখে এই ধান ‘কাইঞ্চা সোনা’ বা কাঁচা সোনা।
হাওরের প্রায় ১০ লাখ কৃষকের কেবল চোখই নয়, দেহ-মন নিয়ে সবাই এখন হাওরের ফসল গোলায় তোলার উৎসবে মেতেছেন। গ্রীষ্মের তীব্র গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার কৃষকের অবয়ব এখন দেখতে পা-ুরপ্রায়। সকাল সন্ধ্যা হাওরে-কান্দায়-খলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী পুরুষ শিশু কিশোর বৃদ্ধ সবাই।
বাম্পার ফলনে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ধানকাটা শ্রমিকরাও ন্যায্য ‘হিস্যা’ (ধান কাটার মূল্য) পেয়ে খুশি। হাওর ঘুরে সবার রোদপোড়া অবয়বে তৃপ্তির হাসি লক্ষ করা গেছে।
সরেজমিন সুনামগঞ্জের দেখার হাওর ও জামালগঞ্জের পাগনার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, অনুকূল আবহাওয়ায় যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শ্রমিকরাও ধান কাটছেন। কৃষক পরিবারের নারীরা ধান শুকানো, বস্তাজাত করা, চিটা ছাড়ানো ও গবাদিপশুর জন্য খর সংগ্রহের কাজ করছেন। খলাঘর ও খলার সামনে অবস্থানরত নারীরা তাদের কিশোরী-তরুণী কন্যাসহ শিশুদেরও নিয়ে এসেছেন। তারাও ফসল তোলার উৎসবে পারিবারিক সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে।
এই চিত্র এখন প্রতিটি হাওরেরই। তবে সরকারি ভর্তুকিতে হার্ভেস্টর যন্ত্র নিয়ে খুশি নন কৃষক ও হার্ভেস্টর মালিকরা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মওসুমে হাওরে বিআর ২৮, ২৯, ৮৮, ৮১, ৮৯, ৯২, সিনজেনটা, হীরা-১,২, সুরভি, এসএলএইটএইচ, ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ হয়েছে। দেশি প্রজাতির গচি, টেপি, বোরোও চাষ হয়েছে কিছু জমিতে। বন্যা ও খরা মোকাবেলা করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন দেশিধান চৈত্রের শেষ দিকে কেটে গোলায় তোলেছেন কৃষক।
কৃষকরা জানান, হাইব্রীড ধান কেয়ার (প্রতি ৩০ শতাংশ) ২৫-৩০ মণ, উফশী ১৬-২০ মণ এবং দেশি ধান ৬-৮ মন হয়েছে। কেয়ার প্রতি সর্বমোট খরচ হয়েছে ৫-৭ হাজার টাকা। ধান চাষ থেকে গোলায় তোলা পর্যন্ত এই ব্যয় হয় বলে জানান কৃষকরা। কৃষি বিভাগের মতে, চলতি বছর জেলায় ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ থেকে উৎপাদন হবে ৯ লক্ষ ২১ হাজার ৪১৩ মে. টন চাল। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। চাষকৃত বোরো ধানের মধ্যে হাওরে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৬৮ হেক্টর এবং নন হাওরের ৫৮ হাজার ২৪২ হেক্টর জমি চাষ হয়েছে।
এবার হাইব্রীড ৬৫ হাজার ২০০ হেক্টর, উফসী ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ২১০ হেক্টর, স্থানীয় মাত্র ১ হাজার হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ ধান বিআর ২৮ ও ২৯ ধান চাষ থেকে কৃষকরা সরে আসছেন। তবে দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও ধানের প্রতি বিশেষ টানের কারণে এখনো অনেক কৃষক মায়া ছাড়তে পারছেন না এই দুই প্রজাতির ধানের। কৃষি বিভাগের পরামর্শ উপেক্ষা করে বিআর ২৮ ও ২৯ আবাদ করছেন।
যারা কৃষি বিভাগের কথায় উফশী ও হাইব্রীড চাষ করছেন তারাও এই ধান নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। ফলন ভালো হলেও হাইব্রীড ধান ঝলক রাজ ও উফশী ৮৮, ৯২ সহ কয়েকটি প্রজাতির পাকা ধানের ঝরে পড়ার হার বেশি। এতে ফলনে প্রভাব পড়ছে বলে জানান কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ধান রোপণের পর যে জমি পানি পায়নি তাদের ধানেরই এই সমস্যা হয়েছে। এখন বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের মওসুম। তাই কৃষি বিভাগ দ্রুত ধান কাটার নির্দেশনা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে প্রায় সাতশটি কাম্বাইন হার্ভেস্টর হাওরে ধান কাটছে। বাইরের জেলা থেকে এসেছে আরো ২৩৬টি। আরো ১৭০টি রিপার যন্ত্র রয়েছে ধান কাটার জন্য। এছাড়াও ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭০ শ্রমিক, বাইরের জেলা থেকে আগত ২৪ হাজার ২৩০ জন এবং বালু মহালের আরো প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক হাওরে এসে ধান কাটার কাজ করছেন। একটি কম্বাইন হার্ভেস্টর মেশিনে দৈনিক ৩০ বিঘা ও একটি রিপান মেশিনে প্রতিদিন ৫ বিঘা জমির ধান কাটতে পারে। এছাড়াও ১ জন শ্রমিক গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ধান কাটতে পারেন। তবে ভর্তুতির কম্বাইন হার্ভেস্টর নিয়ে ক্ষোভ ও প্রশ্ন আছে কৃষকদের। সরকারি ৭০ ভর্তুকির এই যন্ত্র নির্দিষ্ট কম্পানি নিম্মমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে সেট করে দেওয়ার পাশাপাশি ওয়ারেন্টি সময়েও কৃষকদের সেবা দেয়না বলে জানা গেছে।
দেখার হাওরের হিয়ালমারা অংশের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, আমি ৫ কেয়ার জমিতে বোরো চাষ করছিলাম। ৩ কেয়ার কাটি লিছি। ভালো ফলন অইছে। ইবার বছর ভালা। অন্যবার ডোবরার পাইন্যেও আমরা আওর নেয়গি। ইবারের ফসিল আনাম রইছে। একই হাওরের মধপুর গ্রামের কৃষক আলাই মিয়া বলেন, আউরো ১৬ কিয়ার জমিন রইছলাম। ১২ কিয়ার কাটি লিছি। আর চাইর কেয়ার রইছে। ভালা ফসিল অইছে। ভালা লাভবান অইছি। ইলা বৈশাখি পরতি বছর অইলে আমরা ভালা থাকতাম ও দেশরেও ভালা রাখতাম। এই হাওরের গয়াছড়া গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, সরকারি মেশিন গভির জমিনো লামেনা। যারা মেশিন আনছে তারা টেকা বেশি নেয়। মেশিনও নষ্ট অইযায়। আমি লাউড়েরগড় তনি ধান কাউট্যা আনাইছি। ৮ হিস্যায় তারারে খেত দিছি। ধানের সাত ভাগ আমি ও এক ভাগ তারা নিবো। তারারে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কইরা দিছি। যাওয়ার সময় ট্রাক ভইরা ধানও বাড়িত পৌছাইয়া দিমু। তারপরও বইচ্ছর ভালা অওয়ায় ইবার লাভবান অইতাম পারমু। তাহিরপুরের লাউড়েরগড় গ্রামের বালু শ্রমিক আলমগীর মিয়া যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর ও কয়লা আহরণ করেন। তিনি ১৯ জন শ্রমিক নিয়ে দেখার হাওরে ধান কাটতে এসেছেন। আলমগীর বলেন, ১৫-২০ দিন কাটলে ৬ মাস খাইতাম পারমু। ধান বালা অইছে। মাজনও (কৃষক) খুশি. আমরাও খুশি ইবার। দিন মাদানও বালা। ইলা থাকলে এক সপ্তায় গিরস্তের ধান কাটা শেষ করিলিমু। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা আজাদ বলেন, বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। দ্রুত ধান কাটাও হচ্ছে। যন্ত্র ও শ্রমিক পর্যাপ্ত আছে। মওসুমও ভালো। তাই কৃষকরা স্বস্তিতে ধান কাটছেন। এই মাসের মধ্যেই হাওরের বোরো ধান কাটা শেষ হবে। তিনি বলেন, ধান ভালো হয়েছে। তবে যেসব কৃষক জানিয়েছেন উফশী ও হাইব্রীড ক্ষেতে ঝরে যায় তা কারো কারো ক্ষেত্রে সঠিক। কারণ যাদের ক্ষেত পানি পায়নি তাদের ক্ষেতের এই সমস্যা। গত শনিবার পর্যন্ত হাওরে ৬০ হাজার ৩৭১ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। যা আবাদের প্রায় ২৭ ভাগ। এখন প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ হাজার হেক্টর ধান কাটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।