
স্টাফ রিপোর্টার ::
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের খিরধরপুর গ্রাম উন্নয়নের নামে একটি চক্র ‘খাস কমিটি’ গঠন করে সরকারি খাল ও সরকারি কৃষি জমি লিজ দিয়ে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া খিরধরপুর গ্রামের এই চক্র গ্রামের রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে মাটি ভরাটের নামে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রামের এই ‘খাস কমিটি’ সদস্য কর্তৃক উন্নয়নের টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে গত রবিবার বিকেলে খিরধরপুর গ্রামের উত্তরপাড়ায় মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। এসময় একাধিক গ্রামবাসী বক্তব্যে বলেন, খিরধরপুর উত্তরপাড়ার ব্রিজ থেকে কবরস্থান পর্যন্ত মাটি ভরাটের জন্য এই ‘খাস কমিটি’র সদস্যদের হাতে তোলে দেওয়া হয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। কিন্তু এই কমিটির সদস্যরা কাজ না করে সমুদয় টাকা আত্মসাত করেছেন। পরে গ্রামের ৫০টিরও বেশি পরিবার মিলে প্রায় ৯০ হাজার টাকা দিয়ে কিছু পরিমাণে মাটি ভরাটের কাজ করেছেন।
তারা বলেন, গ্রাম উন্নয়নের কথা বলে ‘খাস কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সরকারি খাল ও কৃষি জমি লিজ দিয়ে এবং সরকারি জায়গার মাটি বিক্রি করে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এই খাস কমিটির সদস্যরা গ্রামে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে বিচার-সালিশ করে টাকা উপার্জনের পন্থা খুঁজে বেড়ায়। গ্রামবাসী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আব্দুল বাতেন, আব্দুল মোতালেব, রেজাউল করিম, জুলহাস মিয়া, শাহজাহান মিয়া, রজব আলী, তৈয়ব আলী, লায়েছ মিয়া, আনসার আলী, শাহাবুল করিম, কামাল হোসেন, ফরহাদ মিয়া, নইম উল্লাহ, নাহিদ হাসান, আলী রাজ, আকাশ মিয়া, রিপন মিয়া, কাহার মিয়া প্রমুখ।
এ ব্যাপারে খাস কমিটির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, খিরধরপুর গ্রামের রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি গ্রামের মানুষ গঠন করেছে। আমি গ্রামের উন্নয়ন করে চলেছি।
সরকারি খাল ও খাস কৃষি জমি লিজ দেয়া এবং মাটি উত্তোলন করার বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রামের উন্নয়নের জন্য এসব কাজ করেছি। এতে সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।
খিরধরপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার আলী বলেন, উন্নয়নের নামে খিরধরপুর খাস কমিটির সভাপতি ইকবাল হোসেন ও সাধারণ স¤পাদক হুমায়ূন কবির সরকারি খাল তিন বছরের জন্য ৭ লাখ টাকায় লিজ দিয়েছেন আমাদের সমিতিকে। ওই টাকা দিয়ে গ্রামের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন না করে খাস কমিটির সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদকের বাড়ির রাস্তায় নামেমাত্র মাটি ফেলে আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন।
এদিকে, পুরান বাজার সংলগ্ন উত্তর খিরধরপুর গ্রামে একমুঠোও মাটি ফেলেনি খাস কমিটি। আমরা প্রায় ৫০টি পরিবারের ৯০ হাজার টাকা দিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলেছি। এই দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছি।
একই গ্রামের বাসিন্দা নাহিদ হাসান বলেন, খাস কমিটির সভাপতি ও সাধারণ স¤পাদকের বাড়ির রাস্তায় নামেমাত্র মাটি ফেলে ভরাট করেছেন এবং আমার বসতবাড়ির পূর্ব ও পশ্চিমে অন্তত ৬ ফুট জায়গা টিনের বেড়া ভেঙে দখল করে নিয়েছেন। গত শুক্রবার বাদ জুম্মা ইকবাল হোসেনের লোকজন লাটিসোটা নিয়ে বাড়িতে হামলা করে এবং ভাঙচুর করে। অভিযোগ দাখিলের পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে পুলিশের এসআই মহি উদ্দিন বলেন, খিরধরপুর গ্রামের নাহিদ হাসানের বসতভিটার জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণে হামলার ঘটনায় আমি সরেজমিন তদন্ত করেছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান বলেন, ‘খাস কমিটি’ সম্বন্ধে আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।