
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বর্তমানে ফিনল্যান্ডে কর্মসংস্থানের বাজার গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় অর্থনৈতিক মন্দা, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত মূল্যস্ফীতি এবং প্রযুক্তি ও পরিষেবা খাতে স্বয়ংক্রিয়তার ব্যাপক প্রসার-এ সবকিছু মিলিয়ে দেশের শ্রমবাজারে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এ সংকটে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন বিদেশি শ্রমিকরা, বিশেষত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
বেকারত্বের হার ও বাস্তব চিত্র :
ফিনল্যান্ডের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরুতে দেশের মোট বেকারত্বের হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। হেলসিঙ্কি, ভান্তা, এসপু এবং তুর্কু শহরে নির্মাণ, পরিচ্ছন্নতা, রেস্টুরেন্ট, ডেলিভারি ও লজিস্টিক খাতে কর্মরত অনেক অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। এক প্রবাসী মোহাম্মদ সুমন মুন্সী বলেন, কাজ নেই বাড়িভাড়া, খরচ সব সামলানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।
সমস্যা কোথায়?
১. অভ্যন্তরীণ নিয়োগ হ্রাস: অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ফিনিশ প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নিয়োগে সতর্ক হয়ে পড়েছে। ২. অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই: চাকরির নিশ্চয়তা নেই এমন অনেক বিদেশি, বিশেষ করে বাংলাদেশিরা অস্থায়ী চুক্তির আওতায় ছিলেন। ৩. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা: অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী ফিনিশ বা সুইডিশ ভাষায় দক্ষ না হওয়ায় চাকরির বিকল্প খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ছেন। ৪. আইনগত জটিলতা: চাকরি হারালে রেসিডেন্স পারমিট নবায়নের বিষয়টি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থা :
ফিনল্যান্ডে বসবাসরত আনুমানিক ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশির বেশিরভাগই সেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বড় একটি অংশ কাজ হারানোর পর বেকার ভাতা বা সরকারি সহায়তা পেতে সমস্যায় পড়েছেন। অনেক প্রবাসী মানসিক চাপে ভুগছেন। আর্থিক অনিশ্চয়তা, পরিবারে টাকা পাঠাতে না পারা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছেন তারা।
মার্চ মাসের কিছু বাস্তব ঘটনা :
হেলসিঙ্কির বিভিন্ন কোম্পানিতে মার্চে ৩০০ বাংলাদেশি শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে। তুর্কু শহরে কয়েকটি পরিচ্ছন্নতা প্রতিষ্ঠানের ১২০ অভিবাসী কর্মীকে জানানো হয়েছে, কাজের ঘণ্টা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। দুটি জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মের বেশিরভাগ রাইডারদের ঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসী।
ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা :
অনেকে ভেবেছিলেন ফিনল্যান্ডে স্থায়ীভাবে কাজ করে পরিবার ও ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা গড়বেন। কিন্তু বাস্তবতা এখন স¤পূর্ণ ভিন্ন। রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, কাজ না থাকলে নতুন আবেদন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। অনেকেই হয়ত বাধ্য হবেন দেশে ফিরে যেতে।