
স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দীর্ঘ ৫০ বছরেও প্রতিরোধ হয়নি নদী ভাঙন।
সদর উপজেলার পূর্ব ইব্রাহীমপুর, জগন্নাথপুর, মইনপুর গ্রামে ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে পূর্ব ইব্রাহীপুর গ্রামের আব্দুর রূপান, আলী জাহান ও রহিম হোসেনের বাড়ির অংশ এবং বাড়ির সামনের যোগাযোগ রাস্তার বিরাট অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। এই গ্রামের পুরো রাস্তা নদীতে বিলীন হলে গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, গ্রামের রাস্তা বিলীন হওয়ার কারণে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, শিশু শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, রোগী, মহিলা, চাকরিজীবী, মসজিদে আগত মুসল্লিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন। কবরস্থান রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে।
তারা জানান, নদীর তীরে গাজী রহমানের বাড়ি বিলীন হওয়ার পর ফারুক মিয়ার বাড়ি বিলীন হয়েছে, নদীতে বিলীন হয়েছে মুতলিব মিয়ার ও মুসলিম উদ্দিনের বাড়ির বিশাল অংশ। একই সাথে নদীর তীরবর্তী অর্ধশত বাড়িঘর, গাছপালা বিলীন হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, নদী ভাঙনের শুরুতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নদী ভাঙনের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তখন ভাঙন রোধে অল্প পরিমাণে বস্তা ফেললেও এতে কাজ হয়নি, থামেনি ভাঙন। এখন নদীতে বিলীন হয়েছে যোগাযোগ রাস্তা। এই রাস্তা বিলীন হওয়ায় ধীরে ধীরে গ্রাম দুই ভাগে বিভক্ত হতে চলেছে।
পূর্ব ইব্রাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ির সামনে অন্তত দুইশত ফুট প্রশস্ত নদীর চর ছিল। সবই ভেঙে আমাদের বাড়িও চলে গেছে নদীগর্ভে।
একই গ্রামের বাসিন্দা আলী জাহান, শুকুর আলী, রহিম হোসেন বলেন, আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা, বাড়ির অংশের জায়গা ও অসংখ্য গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন কবরস্থান ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তবে ২/১ বছর আগে এখানে নদী ভাঙন রোধে কিছু বস্তা ফেলা হয়েছিল। তবুও ভাঙন প্রতিরোধ হয়নি।
এদিকে, পূর্ব ইব্রাহীমপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম জগন্নাথপুরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামের মসজিদের সামনের জায়গা নদীতে বিলীন হয়েছে। জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনা নদীতে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকির মুখে আছে স্কুল ও মসজিদ। এছাড়াও বকুল মিয়ার বাড়ি ও আশপাশের ঘরবাড়ি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর তীর এলাকায় অবস্থিত হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের একাংশের প্রায় ২০টি বাড়িঘর ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এদিকে, মইনপুর গ্রামের খাল থেকে হালুয়ারঘাটের ইটখলা পর্যন্ত ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে প্রাইমারি স্কুল, শতাধিক কাচাপাকা ঘরবাড়ি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। অবশ্য কয়েক বছর আগে স্কুল স্থানান্তর করা হয়েছে।
মইনপুর গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মুজিবুর রহমান বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে পুরো গ্রাম। শতাধিক ঘরবাড়ি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা অনেকবার সংশ্লিষ্টদের সাথে দেখা করে ভাঙন প্রতিরোধের কথা বলেছি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাথেও কথা বলেছি, অফিসে আবেদন দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা রামপ্রসাদ বলেন, আমরা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে আছি। কত বাড়িঘর বিলীন হয়েছে তার হিসেব নেই। কিন্তু কার কাছে যাবো। কত জনপ্রতিনিধি আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু কেউ নদী ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করেননি। আমরা গ্রামবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন করেছি। আবেদন দিয়েছি পানি উন্নয়ন বোর্ডে। তবুও কোনো কাজ হয়নি।
পূর্ব ইব্রাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সুরমা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর যাবত নদীর তীরের গ্রামগুলো ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এই কারণে পূর্ব ইব্রাহীমপুর গ্রামের পূর্ব অংশের বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদি যোগাযোগ রাস্তা রক্ষা না হয়, তবে গ্রাম দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে। এপাড়া ওপাড়ার সাথে নৌকায় যোগাযোগ করতে হবে।
মইনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য আব্দুল হাই বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাঙন থামেনি। এ পর্যন্ত শতাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও হাজারো গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা গ্রামবাসীকে নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। নদী ভাঙন রোধে কেউ উদ্যোগ নেননি। এই ভাঙনের ফলে গ্রামের মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, মইনপুর, জগন্নাথপুর ও পূর্ব ইব্রাহীপুর গ্রামের নদী ভাঙন রোধে আগামীতে বরাদ্দ আসলে কাজ হবে। পূর্ব ইব্রাহীমপুর গ্রামের নদী ভাঙন রোধে আপাতত জরুরি কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ আসলে কাজ হবে।