
গত বুধবারে (৯ এপ্রিল ২০২৫) জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ ও মার্চ মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। প্রশাসনিক এমন কার্যক্রম সত্যিকার অর্থেই দেশজুড়ে বর্তমান অকল্যাণকর নৈরাজ্যিক অবস্থা সামাল দিতে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, আমাদের দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কাঠামোটি কাঠামোগত সহিংসতার সংস্কৃতিকে ধারণ করে টিকে আছে। প্রকারান্তরে বলা যায়, এখানে প্রবল শোষণ-নির্যাতনমূলক একটি নৈরাজ্যিক অবস্থা বিরাজ করছে, সম্পদ আত্মসাৎ যার মূল লক্ষ্য। এমতাবস্থায় এখানে এবংবিধ সমাজকল্যাণমূলক সভার সিদ্ধান্ত আসলে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর করা যায় না বা কোনও না কোনও কারণে কার্যকর হয় না বলে এইসব সভার কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত ষোল আনাই লোকদেখানো প্রশাসনিক তৎপরতায় পর্যবসিত হয়ে মাঠে মারা যায়। উদাহরণ স্বরূপ সুরমা নদীর উত্তরের বালুপাথর লুণ্ঠন প্রতিরোধের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত যুগের পর যুগ ধরে সিদ্ধান্তের সীমা পেরিয়ে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের বাস্তবতা লাভ করে না, পর্যালোচনার অন্তরঙ্গ তরঙ্গের সঙ্গে যথারীতি মিশে থাকার বাস্তবতা পেয়ে থিতিয়ে থাকে এবং পর্যালোচনা চলতেই থাকে। কিংবা আজকাল প্রশাসনের ভেতরে শুদ্ধাচার চর্চা চালু রাখার পরেও দুর্নীতি না কমে বরং দিনে দিনে বেড়েই চলে, প্রতিরোধ হয় না কীছুতেই এবং শুদ্ধাচারের চর্চার ভেতরে দুর্নীতিবাজরা শুদ্ধাচার চর্চায় শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার বাগিয়ে নেন। ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে এসপি পদ বাগাতে হয় এবং সে পদাধিকার ব্যবহার করে তিনি তার অধঃস্তন কর্মকর্তাকে ‘টু লাখ টুমোরো’ দিতে বাধ্য করেন এবং যথারীতি প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে দুর্নীতির চক্র গড়ে তোলে দুর্নীতিতে দেশসেরা হতে কার্পণ্য করেন নাÑ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। প্রশাসনের এই লেজেগোবরে অবস্থা দেখে কেউ কেউ বলছেন যে, উপনিবেশ আমলের আমলাতন্ত্রিক ব্যবস্থার খোল নলচে না বদলাতে পারলে পুলিশ কর্তৃক কল্যাণ ও অপরাধ দমনের বিষয়টা আসলে পঙ্গুর গিরি লঙ্ঘনের মতো অসাধ্যই থেকে যাবে। তদুপরি এর চেয়ে এককাঠি বাড়া মন্তব্য করতে কেউ কেউ কার্পণ্য করেন না, তাঁরা বলেন, প্রকৃতপ্রস্তাবে মানুষকে মানুষ কর্তৃক শোষণ করার আর্থনীতিক পরিপ্রেক্ষিতে লাভের লোভে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়া বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কাঠামোটিকেই আগে বদলে দিতে হবে, তবেই বদলে যাবে পুলিশ প্রশাসন এবং থাকবে না কোনও দুর্নীতি, করতে হবে না শুদ্ধাচার, অপরাধ পর্যালোচনার সভা। কারণ তখন সমাজে কোনও অপরাধই থাকবে না, মানুষ বাঁচবে সত্য স্বাধীনতার মাঝে সুন্দরের জন্য, দুর্নীতির কলঙ্কপঙ্কে নাক ডুবিয়ে থাকতে কারও জন্ম হবে না।