
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দেশটির সামরিক সরকার ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সাগাইং শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, ভূগর্ভস্থ ১০ কিলোমিটার গভীরে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত কম্পন অনুভূত হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, ব্যাংকক থেকে কয়েকশ’ মাইল দূরে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ায় অন্তত ৭০ নির্মাণ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। মিয়ানমারে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে রাজধানী নেপিদোতে রাস্তায় ফাটলের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সামরিক সরকার ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
ভূমিক¤পটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্ডালয়ের কাছে আঘাত হেনেছে, যেখানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন। ইউএসজিএস জানিয়েছে, প্রথম ভূমিক¤েপর ১২ মিনিট পর ৬.৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার উৎপত্তিস্থল ছিল সাগাইং থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে।
মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা সোয়ে লুইন জানান, প্রথম ভূমিক¤পটি দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আরও আফটারশকের আশঙ্কায় আতঙ্কিত।
বিবিসি সাংবাদিক বুই থু ব্যাংককে বসবাস করেন। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজডে প্রোগ্রামকে জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাসায় রান্না করছিলেন। তিনি বলেন, আমি খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ব্যাংককের ভবনগুলো ভূমিক¤প সহনশীল নয়, তাই আমি মনে করি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। দেশটির প্রায় সব স্থানীয় রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ইন্টারনেট ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যার কারণে তথ্য পাওয়া কঠিন।
ভূমিক¤েপ মিয়ানমারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। নেপিদোর একটি বড় হাসপাতালকে ‘গণহতাহতের এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে সারিবদ্ধভাবে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মান্দালয়ভিত্তিক একটি উদ্ধারকারী দলের একজন সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতি বিপুল। নিহতের অনেক বেশি। এখনই এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ উদ্ধার অভিযান চলছে। নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি, তবে এটি কমপক্ষে কয়েকশ’ হবে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভূমিক¤েপর প্রভাবে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের কিছু মেট্রো ও লাইট রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংকককে দুর্যোগ এলাকা ঘোষণা করেছে শহরের কর্তৃপক্ষ।
চীনের ইউনান প্রদেশেও ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে। দেশটির ভূমিক¤প সংস্থা জানিয়েছে, সেখানে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৯।
ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সাগাইং ফল্ট লাইন বরাবর ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২০১৬ সালে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী বাগানে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তিনজন নিহত হয়েছিলেন এবং পর্যটন স্পটের মন্দিরের দেয়াল ও চূড়াগুলো ধসে পড়েছিল।
দরিদ্র এই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, খুবই দুর্বল। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা চললেও ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।